ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শেয়ার বাজার: মিউচুয়াল ফান্ড কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা

এস এম গোলাম সামদানী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০
শেয়ার বাজার: মিউচুয়াল ফান্ড কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা গত এক বছরে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তকেই এ জন্য  দায়ী করেছেন।



মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার পর পরে দাম কমে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। তাদের মতে, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে গত এক বছরে তারা যতটা ক্ষতির শিকার হয়েছেন, অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করে এতটা ক্ষতির শিকার তাদের হতে হয়নি।

গত এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট-প্রতি দরপতন হয় ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক বিনিয়োগকারী মার্জিন লোন নিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করায় পুঁজির পুরোটাই খুইয়েছেন। ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর ১৯টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই ১৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন কমে দেড় হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।

বিনিয়োগকারীদের মতে, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য প্রথম ধাক্কাটি আসে গত বছরের ২৬ অক্টোবর। ওইদিন এসইসি অতিমূল্যায়িত হওয়ার অভিযোগে বাজারে লেনদেন হওয়া ২০টি মিউচুয়াল ফান্ডের মার্জিন লোন সুবিধা হঠাৎই স্থগিত করে দেয়।

পরবর্তীকালে গত ২০ ডিসেম্বর বিনিয়োগকারীদের দাবির পটভ’মিতে এসইসি শর্তযুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ ঘোষিত ইউনিটপ্রতি সম্পদ-মূল্যের সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন লোন সুবিধা চালু করে। এসইসি’র ওই ঘোষণায় মাত্র ৪টি মিউচুয়াল ফান্ড এ সুবিধার আওতায় পড়ে। শর্তযুক্ত মার্জিন লোন সুবিধা চালুর পর বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন আরো বেড়ে যায়।

বিনিয়োগকারীরা এ ধকল সামলাতে না সামলাতেই ২৩ ডিসেম্বর এসইসি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যাপারে আরেকটি নির্দেশনা জারি করে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ বছরেরও বেশি পুরনো সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড গুটিয়ে ফেলতে হবে। এ সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের আরেক দফা দরপতন  হয়।

এছাড়া এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘এইমস’ নামের একটি মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ড দুই বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এসইসি এইমস মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর ৭ মার্চ এইমসের রাইট ও বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দেয় এসইসি। এতে এইমসসহ অন্য মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন আবারও শুরু হয়।

এইমসের রাইট ও বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর একজন বিনিয়োগকারী এসইসির ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। এর পরিপ্র্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের রাইট বোনাস বাতিল করার সিদ্ধান্ত ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে।
একইসঙ্গে আদালত এইমসের রাইট বোনাস বাতিল করা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে এসইসির প্রতি রুল জারি করে।
আদালতের রায়ের পরদিন ২৯ মার্চ থেকে এসইসি আবারো এইমসের লেনদেন স্থগিত করে দেয়। এর পর ৪ জুলাই  লেনদেন আবার চালু হয়। কিন্তু লভ্যাংশের বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা না হওয়ায় দরপতন চলতেই থাকে।
   
মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন এবং এসইসি’র বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এসইসি’র সিনিয়র সদস্য মনসুর আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে এসইসি কোনো বির্তকিত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা যা করছি তা বিনিয়োগকারীদের দীর্ষমেয়াদী মঙ্গলের জন্যই করেছি। শেয়ারের দাম কমা-বাড়া স্বাভাবিক বিষয়। ’

ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিŸুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘কার সিদ্ধান্তে মিউচুয়াল ফান্ডের এ অবস্থা হয়েছে এটা বিনিয়োগকারীরা ভালোই জানেন। এ খাতে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার বিনিযোগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছেন এ কথা সত্য। বিষয়টি এসইসিকে ভেবে দেখতে হবে। ’

এ ব্যাপারে আবদুল হামিদ নামের একজন বিনিয়োগকারী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, আমি ২০০৯ সালের অক্টোবরে ১৫ লাখ টাকার মিউচুয়াল ফান্ড কিনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। এসইসির বির্তকিত সিদ্ধান্তের কারণে এ খাত ধবংস হয়ে গেছে। আমার ১৫ লাখ টাকার মিউচুয়াল ফান্ডের বর্তমান বাজার মূল্য ৭ লাখ টাকারও কম।    

বাংলাদেশ সময় ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad