ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

লোকসানের বোঝা নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
লোকসানের বোঝা নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঠাকুরগাঁও: তিন মৌসুমের সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন অবিক্রিত চিনি আর দেড়শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় মিলের ২০১৫-১৬ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।



এ সময় উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, দবিরুল ইসলাম এমপি, ইয়াসিন আলী এমপি, সেলিনা জাহান এমপি, জেলা পরিষদ প্রশাসক সাদেক কুরাইশী, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন, মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন।

এ বছর ৫৬ দিন মিলটি চালু থেকে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে পাঁচ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন টিনি উৎপাদন করবে বলে জানায় মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন।  

তিনি জানান, গেল তিনটি মৌসুম ধরে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি হচ্ছেনা। বর্তমানে মিলটিতে মজুদ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি। এর মধ্যে ২০১২-১৩ সালের উৎপাদিত চার হাজার মেট্রিক টনের বেশি চিনির গুণগত মান নষ্টের পথে।

২০১৩-১৪ সালে অবিক্রিত চিনি আছে দুই হাজার পাঁচশ’ মেট্রিক টন এবং সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সালের চিনি মজুদ আছে তিন হাজার ৮৪৭ মেট্রিক টন।

জেলার ২৩ জন চিনির ডিলার থাকলেও তারা দেশি চিনি বিক্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে চিনি অবিক্রিত থাকা আর শ্রমিক কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও আখের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে মিলটিতে দিনদিন বাড়ছে লোকসান।

মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের অভিযোগ বেতনের বদলে চিনি দেওয়ায় বাহিরে চিনি বিক্রি করতে গিয়ে মূল বেতন থেকে কমে যাচ্ছে শতকরা ছয় থেকে আট ভাগ টাকা।

অন্যদিকে সময় মতো আখের টাকা না পেয়ে আখচাষ থেকে বিমুখ হচ্ছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার সালন্দর গ্রামের আখ চাষি হরিপদ রায়, নারগুন কহরপাড়ার হোসেন আলী, মনির হোসেন বলেন, আখ চাষে দীর্ঘদিন জমি পরে থাকে। একই জমিতে অন্য ফসল করলে লাভ বেশি পাওয়া যায়। এদিকে মিলে আখ দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে টাকাও পাওয়া যায় না। টাকার জন্য ঘুরতে হয়।

ঠাকুরগাঁও চিনি কল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে মিলের অবস্থা জরাজীর্ণ হলেও ঠাকুরগাঁওয়ে একমাত্র ভারী শিল্প এ মিলকে নিয়ে আশার আলো দেখছি। মিলটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে শ্রমিক আখ চাষিদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করবে।

দীর্ঘদিনের পুরানো এ মিলটি বেশি সময় চালু রেখে লোকসান কমাতে মিল কর্তৃপক্ষ বহুমুখী কর্ম প্রস্তাবনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবনা প্রকল্প চালু হলে আরো বেশি চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি এখান থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে জানায় মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন।  

মিলটি সংস্কার করে আখ সংকট রোধে সুগারবিটে উৎপাদন হবে চিনি। আর বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বায়োফার্টিলাইজার প্লান্টসহ বহুমুখী প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাড়বে চিনি উৎপাদন ক্ষমতা, ফলে লোকসান কমে আসবে বলে জানান মিলের ব্যাস্থাপনা পরিচালক।

দেশের চিনিকলগুলোর এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশি চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপণনের উপর গুরুত্বারোপ করে ভারী শিল্প রক্ষায় এগিয়ে আসবে সরকার এমন প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।