ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেলার কার্যক্রম বন্ধের দাবি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু এনজিও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১
জাহাজ ভাঙা শিল্প ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু এনজিও

ঢাকা: পরিবেশের দোহাই দিয়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প, লৌহ এবং ইস্পাত শিল্পকে ধ্বংস করতে কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাহাজ ভাঙা, লৌহ ও ইস্পাত ব্যবসায়ীরা।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিসহ (বেলা) কিছু পরিবেশবাদী এনজিওকে দায়ী করেন তারা।



তাদের অভিযোগ- এসব এনজিও পরিবেশের দোহাই দিয়ে শিল্পটি ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে। এতে করে এ খাতে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রতিদিন শুধু আর্থিক ক্ষতিই হচ্ছে প্রায় ৩০-৩২ কোটি টাকার। এর ফলে শিল্পটির সঙ্গে জড়িত প্রায় দশ লাখ শ্রমিকের বেকার হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।  

বিশেষ কিছু গণমাধ্যম এসব এনজিওকে সহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা। সেইসঙ্গে পরিবেশের দোহাই দিয়ে শিল্পটিকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব শিল্প উদ্যোক্তা।

বুধবার এফবিসিসিআই ভবনে ‘লৌহ ও ইস্পাত শিল্পে সমস্যা ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারে তারা এসব অভিযোগ করেন।

এফবিসিসিআই আয়োজিত ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

এতো বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্প সমিতি, রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশন, ইস্পাত ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। তারা সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত সরকারকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।  

বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, জাহাজ ভাঙা শিল্প সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে এখাতের ভূমিকা অপরিসীম। সরকারও বিষয়টি উপলব্দি করেছে। ফলে সরকার এ খাতকে শিল্পের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অথচ এর জন্য নিদিষ্ট নীতিমালা নেই। ফলে কথায় কথায় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। জেল জরিমানার ভয় দেখানো হয়। মনে হয় যেন ব্যবসা করতে এসে অপরাধ করেছি।

তারা বেলাকে দেশের শত্রু ও দেশোদ্রোহী অভিহিত করে তার কর্মকা- বন্ধের জোড় দাবিও জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বেলা বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে এই শিল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিলীপ বড়–য়া বলেন, ‘জাহাজ ভাঙা শিল্পকে আর দমিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। একে ধ্বংস করার চেষ্টাও সফল হবে না। কারণ সরকার এ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ শিল্পকে রক্ষা করার দায়িত্বও সরকারের। ’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিকে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। ’

ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘পরিবেশের দোহাই দিয়ে কোনো শিল্পকে ধ্বংস করা যাবে না। আবার ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। ’

শিল্প ও পরিবেশ একে অপরের পরিপূরক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো শিল্প নেই যা পরিবেশের জন্য ক্ষতি করে না। ’

হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে দেশের পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে উল্লেখ্য করেন।

জাহাজ ভাঙা শিল্প, লৌহ শিল্প ও ইস্পাত শিল্প ব্যবসায়ীদের সব ধরনের হয়রানি দূর করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আইন করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি হতেও পারে। ব্যবসায়ীদের ছাড়পত্র নিতে হয়রানির হতে হচ্ছে না তাও বলব না। তবে সরকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে সজাগ। সমাধানে কাজ করছে। তবে সময় লাগছে। ’

সভাপতির বক্তব্যে একে আজাদ বলেন, ‘দেশে গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা। যার ফলে ব্যবসায়িা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছে না। অথচ ব্যবসায়িরা সৎ বলে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছে। ’

গ্যাস ও জ্বালানি সমস্যার কারণে ২৩০টি কারখান বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ্য করে এই নেতা বলেন, ‘এর ফলে দেড় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেন, বর্তমান রাজস্বের চেয়ে আরো দুগুন বেশি রাজস্ব পাবেন। ’

তিনি তত্ত্বাবধায় সরকারের বিরোধীতা করে বলেন, ‘তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় এসে লোভে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে। এটা দেশের জন্য মঙ্গল নয়। ’

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতারা এই শিল্পকে টেকসই করতে কাঁচামাল আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারসহ এ খাতের ব্যবসার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (এসইজে) করার দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।