ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিড়ির সব ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হবে : শিল্পমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১১
বিড়ির সব ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হবে : শিল্পমন্ত্রী

ঢাকা : আসন্ন বাজেটে বিড়ির ওপর আরোপিত সব ট্যাক্স প্রত্যাহার করে বিদেশি সিগারেটের ওপর চার ক্যাটাগরির ট্যাক্স আরোপের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া।

বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত চারদলীয় জোট সরকার কর্তৃক বিড়ির ওপর অযৌক্তিক করারোপের প্রতিবাদ, বিড়িশিল্পকে সচল রাখার লক্ষ্যে বিড়ির ওপর থেকে সকল প্রকার শুল্ক প্রত্যাহার ও ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ অন্যান্য দাবিতে আয়োজিত ঢাকা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।



মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি সবার আগে ঐক্যবদ্ধ সমর্থন দিয়েছিল এদেশের বিড়ি শ্রমিকরা। ’

শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজ আপনারা যে যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছেন, এটা শুধু আপনাদের নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্ন নয়, পরিবার পরিজনের অস্তিত্বের সংকটও বটে। আশাকরি এ যুক্তিসঙ্গত দাবি আদায়ে আপনারা সফল হবেন। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘আজ যারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে, তাদের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রিহমান নিজামী আদমজী পাটকল বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রকিকে বেকার করেছেন। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করেছেন। আমরা একে একে সকল বন্ধ কলকারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। আশাকরি এই মেয়াদে আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে ৫০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব। ’
 
দিলীপ বড়–য়া বলেন, ‘একটি বিরোধী কায়েমি মহল ষড়যন্ত্র করে মেহনতি মানুষকে বিপদগ্রস্থ করতে চায়। জনগণ তাদের চিনতে পেরেছে। দেশে তারা হালে পানি না পেয়ে সাত সাগর তের নদী দূরে লন্ডন-আমেরিকা গিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪০ বছরের ৩০ বছরই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকায় এখনো এদেশের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। ’

তিনি বলেন, ‘তারা বিড়ি শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী কথা বলে, আবার তামাক চাষে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সিগারেট কারখানার সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তাই বিড়ি শ্রমিকদের দাবির প্রতি আমি সংহতি জানাচ্ছি।

সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘বিড়িশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে, শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে তাদের যুক্তিসঙ্গত দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। যদি কেউ বাংলাদেশকে পরিপূর্ণ ধূমপানমুক্ত করতে পারে, তাকে ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু যেখানে বিদেশ থেকে সিগারেট আমদানি বাড়ছে, নতুন নতুন সিগারেট কারখানা স্থাপিত হচ্ছে, সেখানে বিড়িশিল্পকে সঙ্কুচিত করা যাবে না। দেশে তামাক চাষ বাড়ছে। বিড়ি কারখানা বন্ধ হলে এ তামাক কোথায় যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চান না দেশের একটি শ্রমিকও বেকার হোক। বিদেশের দামি সিগারেট খান বিত্তবান ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা। সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ালেও তারা তা কিনতে পারবে। কিন্তু বিড়ির ওপর ট্যাক্স বাড়ালে বিড়ি কারখানা বন্ধ হবে এবং ২৬ লাখ শ্রমিক বেকার হবে। বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার। তাই চারদলীয় সরকারের আমলে বন্ধ হওয়া কলকারখানা এই সরকার চালুর ব্যবস্থা নিয়েছে। ’

সম্মেলনের প্রধানবক্তা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু রায় রমেশ শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘বিড়ি বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে জড়িত। এদেশের অনেক শিল্পগোষ্ঠীর মূল এবং আদি ব্যবসা হলো বিড়ি। কেউ স্বেচ্ছায় বিড়ি বাঁধা ও স্যাঁকার কাজ করে না। বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ এ কাজ করে। বিড়িশিল্পের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আগে বিড়ি শ্রমিকদের পুনর্বাসন করতে হবে। পুঁজিপতি বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় বিড়ি শ্রকিদের পেটে লাথি দিলে তা শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে। ’

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাজেটের আগে সবার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু যারা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেয়, সেই শ্রকিদের সঙ্গে কথা বলেন না। পুঁজিপতি বণিক জোতদাররা স্বার্থ ফুরালে সরে পড়বে। কিন্তু শ্রমিকশ্রেণী সরে পড়বে না। তাই বাজেটে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ’
 
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বাবু রায় রমেশ বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও লড়াই ছাড়া, সংগ্রাম ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি। তাই দাবি আদায়ে শ্রকিদের লাড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। ’

সম্মেলনে টাঙ্গাইল জেলা বিড়িশ্রমিক ফেড়ারেশনের সাধারণ সম্পাদক সোনাই ভাই বলেন, ‘বিড়ির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু শ্রমিকের শ্রমের দাম বাড়েনি। সারাদেশে বিড়ি শ্রমিকের একই মজুরি নির্ধারন করতে হবে। বিড়ির ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার না করলে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। ’

সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও কারণ তুলে ধরেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমকে বাঙ্গালি।

তিনি বলেন, ‘বিড়িশিল্প একটি শ্রমঘন শিল্প। এক সময় ৫০ লাখ গ্রামীণ শ্রমিক এ শিল্পে নিয়েজিত ছিল। কিন্তু কম দামের সিগারেটের ব্যাপক বিস্তারের কারণে বিগত এক দশকে বিড়িশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুল্ক বৈষম্যের কারণে একদিকে কম দামের সিগারেটের বাজার বিস্তৃত হয়েছে, অন্যদিকে সংকুচিত হয়েছে বিড়ির বাজার। ফলে একের পর এক বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়েছে। গত এক দশকে প্রায় দেড়শ বিড়ি কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে বেকার হয়েছে ২৬ লাখ শ্রমিক। কম দামি সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিড়িশিল্প সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং শ্রমঘন বিড়িশিল্প রক্ষার জন্য বিদ্যামান শুল্ক বৈষম্য দূর করতে হবে। বিড়ির শুল্ক হ্রাস না করলেও কমদামী সিগারেটের শুল্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ’

তিনি জানান, ‘২০০৩-০৪ অর্থ বছর পর্যন্ত সিগারেটের সর্বনিম্ন ধাপের শুল্ক ছিল ৩৫ শতাংশ। কিন্তু পরের বছর সিগারেটের সর্বনিম্ন ধাপের শুল্ক ৩২ শতাংশ করা হয় এবং তা অব্যাহত থাকে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ২০১০-১১ অর্থ বছরে করের পরিমাণ সামান্য বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে ২ শতাংশ কম। অর্থাৎ ধূমপান নিরুৎসাহিত করার অজুহাতে বিগত সরকারগুলো বিড়ির শুল্ক বৃদ্ধি করলেও কমদামী সিগারেটের শুল্ক উল্টো কমিয়েছে। এই দ্বৈত নীতি পরিহার করতে হবে। কমদামী সিগারেটের প্রতি সরকারের নমনীয়তার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো ২০১০ সালের ১০ জুন জারিকৃত জাতীয় রাজস্ববোর্ডের ১৮ নম্বর প্রজ্ঞাপন। এতে সর্বমোট চার ধাপের সিগারেটের মধ্যে সর্বোচ্চ ধাপের সঙ্গে তার পরের ধাপের ব্যবধান ২ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ব্যবধান ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় প্রথম ধাপের শুল্ক ব্যবধান ২০ শতাংশ রাখা হয়েছে। ’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হাকিম, যুগ্ম সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান ও আমিউদ্দিন বিএসসি, প্রচার সম্পাদক লুৎফর রহমান, সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, বিড়ি শ্রমিক নীলা রাণী, কাকলী খাতুন, আলহাজ নায়েব আলী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৫৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।