ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১১
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: আবারও নতুন করে হতাশায় ভুগছেন পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। টানা চার কার্যদিবস দরপতনে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দেশের প্রধান পুঁিজবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)।

ফলে পুঁজি হারিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

সোমবার এ ধরনের ঘটনা কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে। ফিনিক্স সিকিউরিটিজ মতিঝিল শাখায় মুসলেম উদ্দিন (৫৪) নামের এক বিনিয়োগকারী বাজার নিম্নমূখী হওয়ার কারণে স্ট্রোক করেন। এসময় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সোমবার পুঁজিবাজারে বেশিভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে ডিএসই’র উভয় সূচকও।

ডিএসই’র সাধারণ মূল্য সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৩৫.৯০ পয়েন্ট কমে ৫৩৭৬.৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর গত চার কার্যদিবসে ডিএসই সাধারণ সূচক হারিয়েছে ৪১৪.৯০ পয়েন্ট।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ৩৪৪ কোটি ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮১৯ টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে ৯৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা কম।

এদিকে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ২৫৯ টি কোম্পানির  ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৭৫৯ টি  শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে।

আজ লেনদেনকৃত ২৫৯ টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯ টির কমেছে ২১০ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০ টি কোম্পানির শেয়ারের।

বাজারের এ পরিস্থিতি সম্পের্কে ডিএসই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটো’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাজারের এ পরিস্থিতির জন্য তিনটি কারণ রয়েছে। তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথম কারণ বাজেট আতংক। বিনিয়োগকারীরা বাজেটে কি ঘোষণা আসছে তা নিয়ে এখনই গুঞ্জন শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে এ গুঞ্জন শুনে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
দ্বিতীয় কারণ, বাজারে নতুন কোন বিনিয়োগ আসছেনা। পাশাপাশি আগে যারা মার্কেট থেকে টাকা উত্তালন করেছেন তারাও মার্কেটে প্রবেশ করছেনা। ফলে শেয়ার বিক্রির চাঁপ বাড়ছে। কমছে শেয়ারের মূল্য।
তৃতীয় কারণ-ব্যাংকের ডিপোজিটের সুদের বেড়ে যাওয়া। আগে যখন ডিপোজিটের সুদের হার ৯ শতাংশ ছিলো, সেই সময় অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছেন। এখন ব্যাংকগুলো ডিপোজিটের হার বাড়ানোর ফলে অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে। এ সব কারণেই পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

তবে বেশিদিন এ অস্থিরতার থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাজারে চরম মন্দা পরিস্থিতির বিরাজ করলেও এর থেকে উত্তরণে জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেই। এ পরিস্থিতির জন্য তারা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে দায়ী করেন।

রাজ্জাক সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আফাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজার নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তব্য করায় বাজারের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মতিঝিল এলাকায় সিসি ক্যামারা লাগানোর কথা বলছেন।

তিনি বলেন, বাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকলেও বর্তমানে বিক্ষোভ বা সহিংসতা নেই। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের তোড়জোর বাজারের ভবিষ্যত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, বাজারে আরও বড় দরপতন ঘটার আশঙ্কা থাকায় সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার চিন্তা করছে। বিনিয়োগকারীদের এই মনোভাব দরপতনের  ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে পাশা ক্যাপিটেলের বিনিয়োগকারী হুমায়ুন কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, আগামী বাজেটে মূলধনী মুনাফার ওপর কর আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে এ বক্তব্য অর্থমন্ত্রীর মুখে শোনা গেলে বাজার কিভাবে ভালো হবে। এছাড়া তিনি শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কেও নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘন্টা ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।