ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্টিল ও রি-রোলিং শিল্প সঙ্কটের মুখোমুখি

টিটু সাহা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১২
স্টিল ও রি-রোলিং শিল্প সঙ্কটের মুখোমুখি

ঢাকা: বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমুল্যায়ণ ও ডলারের উপর্যুপরি মুল্যবৃদ্ধি, গ্যাস সঙ্কট, লোডশেডিংসহ নানা কারণে দেশের স্টিল ও রি-রোলিং শিল্প বর্তমানে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়েছে। নানা সমস্যায় এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।



ফলে এসব পণ্য ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে এর সামগ্রিক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতেও। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী রোববার বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসেসিয়েশনের একটি প্রতিনিধি দল শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে দেখা করছেন।
 
বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার বিদ্যুতের মূল্য গড়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। ফলে বিদ্যুৎ নির্ভর স্টিল ও রিরোলিং শিল্প ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় এখন আগের তুলনায় আমাদের ইউনিট প্রতি ২৪ শতাংশ বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। ফলে এ শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। ’

 অবিলম্বে তিনি বিদ্যুতের দাম কমিয়ে তা পুন:র্নিধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসেসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বিদ্যুৎ এবং ডলারের মুল্যবৃদ্ধির ফলে এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য এমএস রডের দাম প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ টাকা বেড়ে যেতে পারে। কেবল বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলেই রডের দাম টনপ্রতি প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বর্তমানে ডলারের দ্রুত মূল্যবৃদ্ধির ফলে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় অনেকখানি বেড়ে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে চাই না। কারণ এ অবস্থায় পণ্য ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। পণ্য বিক্রি না হলে আমরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। দেশের নির্মাণ শিল্প সমস্যায় পড়বে। এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। ফলে সামগ্রিক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। ’

বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুর রহমান বকুল বলেন, দেশের ৪০০ স্টিল ও  রিরোলিং মিল বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্টিল ও রিরোলিং শিল্পের সমস্যা বহুমুখী। এ কথা সবাই জানে এ শিল্প দুটি বিদ্যুৎ ও গ্যাস নির্ভর। কিন্তু বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং ও নিুপ্রবাহ (লো ভোল্টেজ), গ্যাস সঙ্কটের কারণেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হয়।

যেখানে প্রতিটন বিলেট তৈরিতে ৭শ’ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যয় হবার কথা সেখানে ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।

স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম বলেন, ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এ শিল্পের ওপর সরকারের ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা আছে। আবার আমাদের কাছে আদায় করা হচ্ছে পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট (পিএফআই) চার্জ। এসব কারণে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। ’

তিনি ডিমান্ড চার্জ প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া পিএফআই চার্জ আদায় বন্ধ অথবা বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষকে নিজ খরচে পিএফআই ক্যাপাসিটার স্থাপনের দাবি জানান।

বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসেসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দেশের অটো রিরোলিং মিলগুলো রডের মোট জাতীয় চাহিদার ৮০ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এছাড়া শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ’

সরকার এসব সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প থেকেই জাতীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে এমএস রড রপ্তানি সম্ভব বলে জানান তিনি।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আগামী রোববার বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হবে। সেখানে স্টিল শিল্পখাতে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে এবং তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad