ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আরো ২৩ সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে যাবে: কমিশনের চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১০
আরো ২৩ সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে যাবে: কমিশনের চেয়ারম্যান

ঢাকা: সরকারের মালিকানাধীন আরো ২৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া থেমে নেই। এগুলো অবশ্যই ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল।



সোমবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিভিন্ন সময়ে সরকারি কলকারখানা নতুন করে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বিরোধীতা করেছেন এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। এরই পরিপ্রেেিত কমিশনের কর্মপরিধি ও চলমান প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা জলিল বলেন, ‘সরকারের কাছে থেকে নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনকভাবে চলতে পারছেনা, সেগুলো কীভাবে সুষ্ঠুভাবে লাভজনক পথে যেতে পারে সেবিষয়ে জরিপ করছে কমিশন। এছাড়া তাদের জন্য পৃথকভাবে সুপারিশও প্রণয়ন করা হবে। ’

আবদুল জলিল বলেন, ‘অনেকের কথা শুনলে মনে হয়, এখানে দোকানদারি করতে এসেছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আমি এখানে কোনো কারখানা বিক্রি করতে আসিনি, আমি এসেছি সেগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রা করতে। ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে এসব কারখানার শ্রমিকরা যেমন ভালোভাবে চলতে পারবেন, তেমনি সরকারও রাজস্ব আয় করতে পারে- আমি তাই চাই। প্রধানমন্ত্রীকেও আমি তাই বলেছি। ’

তিনি বলেন, ‘যে ২৩টি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগের উৎপাদন বন্ধ আছে এবং অন্যগুলোও লাভের মুখ দেখতে পারছেনা। ’

বেসরকারিখাতে মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার জন্য কমিশনের কাছে পাঠানো প্রতিষ্টানগুলো হলো রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সেলস অর্গানাইজেশন, কাপ্তাইয়ের লুম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স, কর্ণফুলি টিম্বার এক্সটারকশন ইউনিট কাপ্তাই, চট্টগ্রামের আরকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সরকারের শেয়ার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ), যশোরের এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সরকারের শেয়ার ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ), রাঙামাটি টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেড, টাঙ্গাইল কটন মিলস লিমিটেড, মাগুরা টেক্সটাইলস মিলস লিমিটেড, রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি, ঠাকুরগাঁও সিল্ক ফ্যাক্টরি, সাভারের নয়ারহাটে অবস্থিত ঢাকা লেদার কোম্পানি লিমিটেড, পাবনার পাকশীতের অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড, চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, রাঙ্গামাটির কর্ণফুলি রেয়ন ও কেমিক্যাল লিমিডেট, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ক্যান কোম্পানি (সরকারের শেয়ার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ), নায়ারণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত মনোয়ার জুট মিলস লিমিটেড, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের এরোমা টি লিমিটেড, নরসিংদীর হ্যান্ডলুম সার্ভিস সেন্টার, সুনামগঞ্জের দেবুরঘাটে অবস্থিত ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার অ্যান্ড হোলসেল ফিস মার্কেট, ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি (সরকারের শেয়ার ৩০ শতাংশ), সালাতিন সিন্ডিকেট (সরকারের শেয়ার ২০ শতাংশ), টাইগার ওয়্যার প্রোডাক্টটস (সরকারের শেয়ার ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ) এবং কিশোরগঞ্জের ন্যাশনাল সুগার মিলস লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কমিশনের কাছে বেসরকারিকরণের  জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়।    

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সরকারের দুইমন্ত্রীর বিরোধীতা প্রসঙ্গে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে বলেননি যে এগুলো বেসরকারিকরণ করা যাবেনা। এজন্য আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি, পর্যায়ক্রমে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আবদুল জলিল বলেন, ‘বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ’

কমিশনের পরিচালক জগলুল পাশা বলেন, ‘১৯৯৩ সালে ‘প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড’ এবং পরবর্র্তীতে ২০০০ সালে কমিশনে রূপান্তরের পর থেকে ৭৫টি সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হয়। এদের মধ্যে ২১টি অত্যন্ত লাভজনকভাবে চলেও ১৬ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলোও মোটামুটিভাবে চলছে। ’

কমিশনের পরিচালক জানান, ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি হস্তান্তরের অপোয়, ৪টি দরপত্র আহ্বানের অপোয় এবং ১৩টির মূল্যায়ণ চলছে। অন্য ১০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে জমি সংক্রান্ত বিষয়, ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য দাপ্তরিক বিষয়াদির খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বেসরকারিকরণ সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে তিনি গত এক বছরে চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে তার স্পেন, ইতালি, জার্মান সফরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় সব ধরনের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানই জাতীয়করণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস নামে বিসিএসের ক্যাডার সার্ভিসও চালু করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় লাভ না হওয়ায় ১৯৭২ সাল থেকেই এসব প্রতিষ্ঠান আবারো ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেওয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলেই ১১৪টি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে চলে যায়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণের জন্য ১৯৭৫ সালে গঠন করা হয় ‘ডিসইনভেস্টমেন্ট বোর্ড’। ১৯৯৩ সালে এ বোর্ডের নামকরণ করা হয় ‘প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড’। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি আরো বিস্তৃত ও মতায়নের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে প্রাাইভেটাইশন কমিশন গঠন করা হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ৪৯২টি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে চলে যায়।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল বলেন, ‘১৯৯৩ সালের আগে হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে কমিশনের কাছে এখন কোনো তথ্যই নেই। এজন্য ওই সময়ের বোর্ডের দায়িত্বশীলরাই দায়ী। ’         

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ২৬ জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।