ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপর নাখোশ অর্থমন্ত্রী

পবন আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১১
এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপর নাখোশ অর্থমন্ত্রী

ঢাকা: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে চলতি বছরেও সংশয় দেখা দিয়েছে। শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সংশোধিত এডিপি প্রণীত হলেও অর্থবছরের সাত মাস পার করে তার বাস্তবায়ন হয়েছে গড়ে ৩২ শতাংশ।



কোনো কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগে এডিপি বাস্তবায়নের পরিমান ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে মাত্র।

খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সরাসরি দায়ী করে তিনি তার অসন্তুষ্টি কথা জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রণায় সূত্রে জানা গেছে, এডিপি বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে এমন ১৪টি বিষয়ে চিহ্নিত করে সেগুলো পর্যায় ক্রমে সংশোধন করার কথাও বলেছেন আর্থমন্ত্রী।
 
তিনি বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, অর্থছাড়ে বিলম্ব আর অভ্যন্তরীণ জটিলতায় মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ প্রতিবছরের ন্যায় এবারো কমাতে হলো।

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সংশয়ের কথা বলেন।

তবে, এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

ওই সভায় যেসব মন্ত্রণালয়কে তলব করা হয় সেগুলো হচ্ছে - পানি সম্পদ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, যোগাযোগ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এছাড়া  সড়ক, বিদ্যুৎ, স্থানীয় সরকার, সেতু, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিভাগ এ বৈঠকে অংশ নেয়।    

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে শীর্ষ দশ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। অথচ গত ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের একই সময় বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৫ শতাংশ। এমন অবস্থায়ই সংশোধন করা হলো এডিপি। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপিতে ১১৮৪টি প্রকল্পের আওতায় মোট বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এর আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ বিগত বছরগুলোর সংশোধিত এডিপিও শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) জন্য ৩৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। অর্থাৎ ৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা কমানো হয় এডিপির আকার। এর মধ্যে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের এডিপি হতে সংশোধিত এডিপিতে স্থানান্তরিত প্রকল্পের সংখ্যা ৯১৫টি এবং নতুনভাবে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পের সংখ্যা ২৭০টি।

বর্তমান সরকার মতা গ্রহণ করার পর শতভাগ এডিপি বান্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। এ ল্য অর্জনে দ্রুত বাস্তবায়নে নানামুখী উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বান্তবায়ন পরিবীণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, জ্বালানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত বিবেচনা করে এ খাতের উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবছর ৮৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও অর্থবছরের সাত মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৪০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ১৬ শতাংশ।

জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ বিভাগের ৩ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করেছে মাত্র ৮০৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ২৪ শতাংশ।

বিদ্যুৎ খাতে ৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মাত্র ১ হাজার ২২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ২৫ শতাংশ।

সেতু বিভাগে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা যা বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশ।

এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২৪ শতাংশ।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় করেছে ২৭৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ। সংশোধিত এডিপিতে স্থানীয় মুদ্রা ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৬৬ শতাংশ এবং প্রকল্প সাহায্য ১১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা রয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৩৪ শতাংশ। আরএডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা হলো ১১৮৫টি।

২০১০-২০১১ অর্থবছরের আরএডিপিতে বরাদ্দকৃত প্রধান প্রধান খাতের মধ্যে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান এবং পানিসম্পদ খাতে ৮ হাজার ১০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা (২৩ শতাংশ)।

বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ৬ হাজার ৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (১৭ শতাংশ)।

পরিবহন খাতে ৫ হাজার ২৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা (১৫ শতাংশ)।
শিা ও ধর্ম খাতে ৫ হাজার ৫৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (১৪ শতাংশ)।

এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১০ শতাংশ) রয়েছে।

স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩ হাজার ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (৯ শতাংশ) রয়েছে। শতভাগ বাস্তবায়নের ল্য নিয়ে প্রণয়ন করা হলেও সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে তার ল্য পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টার্চায্য বাংলানিউজকে বৃহস্পতিবার বলেন, আমরা পরিস্থিতির কোন মূল্যয়ন করি না। ফলে প্রতি বছরই এডিপি শতভাগ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হতে হচ্ছে। এবারও সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

ড. দেবপ্রিয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই বড় বাধা হিসাবে দেখছেন। তিনি বলেন, এবারও এডিপির বরদ্দকৃত টাকার অঙ্ক কমানো হয়েছে। অর্থ বছরের সাত মাসে এডিবি বাস্তবায়নের হারও আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় ভাট্রার্চায্য বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের আগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। সরকার যদি এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন চায় তাহলে আগে পরিস্থিতির মূল্যয়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের অভ্যন্তরীণ জটিলতা বন্ধ করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ১১ মার্চ ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।