ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব আয় একমাসে অর্ধেকে নেমেছে

জেবুন নেসা আলো, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১১
পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব আয় একমাসে অর্ধেকে নেমেছে

ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে সরকারি রাজস্ব আয়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বর থেকে বাজারে ধসের কারণে লেনদেন কমে যাওয়াতে প্রতিমাসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আয় ও লেনদেনের ওপর উৎসে আয়কর কমছে।



রোববার ডিএসই ফেব্রুয়ারি মাসের কর জমা দিচ্ছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, এ মাসে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা জানুয়ারি মাসের চেয়ে ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা কম। জানুয়ারি মাসে ডিএসই সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেয় ১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ছিলো আগের মাসের তুলনায় ২০ কোটি ২ লাখ টাকা কম। ডিসেম্বরে ডিএসই লেনদেনের ওপর সরকারকে রাজস্ব আয় জমা দেয় ৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

আর্থিক লেনদেন কমে যাওয়ার কারণেই রাজস্ব আয় কমছে। ডিসেম্বরে ডিএসইর মোট আর্থিক লেনদেন হয় ৩৮ হাজার ৭১৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৯৬ কোটি ৯২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭ টাকা। আর জানুয়ারিতে এ লেনদেন কমে দাঁড়ায়  ১১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৮৭২ টাকা।

আর্থিক লেনদেন কমার সাথে সাথে ডিএসইর শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।

শেয়ার লেনদেনে প্রতি হাওলায় ডিএসই ২ টাকা করে আয় হয়। এক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি বিক্রিতে দুই টাকা ও কেনায় দুই টাকা মিলে মোট আয় দাঁড়ায় ৪ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী ডিসেম্বরে মোট ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ২৭ হাওলা লেনদেন হয়। এখান থেকে ডিএসইর আয় হয় ২ কোটি ১২ লাখ ৯২ হাজার ১০৮ টাকা। জানুয়ারি মাসে এসে শেয়ারের মোট ২৮ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ হাওলা লেনদেন হয়। এখান থেকে ডিএসইর আয় হয় ১ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৪০ টাকা। আগের মাসের তুলনায় শেয়ারের ২৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ হাওলা কমেছে এবং ডিএসইর আয় কমেছে ১ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে এসে শেয়ারের মোট ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫৫ হাওলা লেনদেন হয়। এখান থেকে ডিএসইর আয় হয়েছে ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ২২০ টাকা। আগের মাসের তুলনায় শেয়ারের ৬ লাখ ১ হাজার ৬০৫ হাওলা কমেছে এবং ডিএসইর আয় কমেছে ২৪ লাখ টাকা।    

প্রতি মাসের গড় লেনদেনের ওপর ডিএসই ট্যাক্স দেয় সরকারকে। সে ক্ষেত্রে লেনদেন বাড়লে সরকারও লাভবান হয়। লেনদেনের ওপর ১০০ টাকায় সরকার ২ পয়সা উৎসে কর পায়। প্রতি বছর পুঁজিবাজারের লেনদেন বাড়ার সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ে।

২০১০ সালে এসে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাজারের ওপর সরকারেরও সুনজর ছিল। ফলে এ বছর লেনদেন হাজার কোটি টাকা অতিক্রমের পর ৩ হাজার কোটি টাকার মাইলফলকও অতিক্রম করে। বছরজুড়ে উর্ধ্বমুখী লেনদেনের ধারাবাহিকতায় ডিএসই শেয়ার লেনদেনের ওপর উৎসে কর সংগ্রহ করে ২০১০ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় ডিএসই। এর আগের বছর ২০০৯ সালে এ খাত থেকে সরকারের আয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৪০ টাকা। এক বছরে আয় বাড়ে প্রায় ৫ গুণ।

কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজার উল্টোপথে হাটা শুরু করে।   গত ৮ ডিসেম্বও থেকে বাজারে ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। বাজারে ধস শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীরাও বাজার বিমুখ হয়ে ওঠে। এতে লেনদেনও ব্যাপক কমে যায়। লেনদেনের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে কমতে কমতে এখন ৬০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। আর্থিক লেনদেন কমার সাথে সাথে রাজস্ব আয়ের হারও কমেছে।

এভাবে লেনদেন ক্রমান্বয়ে কমার সাথে সাথে ডিএসইর আয় ও সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে। পুঁজিবাজারের এ অবস্থা চলতে থাকলে তা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপাওে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, প্রতিমাসেই ডিএসইর আয় কমছে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ন ভ’মিকা রাখে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
     
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সরকার পুঁজিবাজার থেকে মোট রাজস্ব আয় করেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৫ টাকা। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় বেড়ে দাড়ায় ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৬৩৩ টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৬ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৬ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ২০২ টাকা এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয় ৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

২০০৯ সালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাইয়ে সার্বিক লেনদেনের ওপর সরকার রাজস্ব আয় পায় ৬ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩ টাকা, আগস্টে ৬ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার ৯১২ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৫ টাকা, অক্টোবরে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ টাকা, নভেম্বরে ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮ হাজার ৪২৯ টাকা, ডিসেম্বরে ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭০২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৬ টাকা, মার্চে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৩ টাকা এবং সর্বশেষ এপ্রিলে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৭৭ টাকা রাজস্ব আয় পায় ।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘন্টা, ০৫ মার্চ, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad