রাজশাহী: মাঠ ভরা ফসল। ফলনও ভালো হয়েছে।
রাজশাহীর বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে এখন আলুর সমারোহ। আলুকে আদর করে স্থানীয়রা ‘সোনালী ডিম’ বলে ডাকতেন। এক সময় ‘সোনালী ডিম’ চাষ করে অনেক লাভের মুখ দেখতেন কৃষকেরা। অথচ এবছর বাম্পার ফলন হওয়ায় আলু চাষিরা ‘মরতে’ বসেছেন।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে কনকনে শীতে মধ্যে মাঠে কাজ করেছেন কৃষকেরা। এখন সেই স্বপ্ন কৃষকের জীবনে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
হিমাগারে আলু রাখার জায়গা নেই। জোতদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে হিমাগারে তারা আলু রাখার সুযোগ পাননি। এতে চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আলুর একটি বড় অংশ কেবল সংরণের অভাবে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বেশির ভাগ আলুই কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে নাম মাত্র দামে। রাজশাহীর বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা কেজি দরে।
মোহনপুর উপজেলার কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি কেজি আলুতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯ টাকা। কিন্তু প্রতি কেজি আলুর খুচরা বাজার মূল্য এখন ৫ টাকা। ফলে দাম ওঠবে না।
একই তথ্য দিলেন পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেহ আহম্মেদ। তার মতে, বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি করে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। অনেকে পুঁজিও হারাচ্ছে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের আলুচাষি নাজিম উদ্দিন শেখ, বাটুপাড়া গ্রামের মফিজ, নুড়িয়াত্রে গ্রামের আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেকেই এবার ৩ বিঘা করে আলু চাষ করেছেন। হিমাগারে আগাম বুকিং না দেওয়া তারা সেখানে আলু রাখতে পারছেন না। সব আলুই তাদেরকে বাড়িতে রেখে বিক্রি করতে হবে।
পবা উপজেলার তেঘর গ্রামের আফাজ উদ্দিন, আলতাব উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন এবং আলাউদ্দিন সরকার ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। আলু বিক্রি করে চাষাবাদের খরচ তো দূরের কথা শ্রমিকের খরচই ওঠছে না। আর ব্যাংক ঋণের বোঝা থেকেই যাবে।
রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত আলুচাষি রহিম উদ্দিন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান দামে আলু বিক্রি করলে প্রতি বিঘা আলুতে ১০ হাজার টাকা লোকসান হবে। ’
তিনি জানান, এক বিঘা আলু চাষ করতে কৃষকের ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যাবে ২০ হাজার টাকা।
রাজশাহী জেলায় ২৬টি আলু রাখার হিমাগার আছে। এরপরও কৃষকের ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারের বাইরে থেকে যাবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) অসীম কুমার বাংলানিউজকে জানান, এবার রাজশাহী জেলায় ল্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১১০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। জেলায় আলু চাষের ল্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ৫০ হেক্টর। হয়েছে ৩৫ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে।
তিনি আরও জানান, সংরণের অভাবে রাজশাহীর বাজারে আলুর দাম পড়ে গেছে। একারণে কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কৃষি প্রধান দেশ হলেও কোনো সরকারই কৃষক উৎপাদিত পন্যের দাম নির্ধারণ করে নি। যে কারণে কৃষকরা অনেক সময় না বুঝেই আবাদ করে। কোন ফসলে লাভ হয়, আবার কোন ফসলে হয় না সেটা না বুঝে কৃষকরা চাষ করেন। একারণে লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাদের। ’
এদিকে জেলার এবার আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ বস্তা (৮৫ কেজিতে ১ বস্তা)। জেলার হিমাগারগুলোতে সব মিলিয়ে আলু রাখা যাবে ৩২ লাখ বস্তা। বাকী প্রায় ৭৩ লাখ বস্তা কৃষকের বাড়িতে থেকে যাবে।
রাজশাহী জেলা আলু ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, গত বছর ৮৫ কেজি আলুর ভাড়া ছিল ২২৫ টাকা। এবারে সেই ভাড়া ২৭০ টাকা করা হয়েছে। এর পরও অধিকাংশ কৃষক হিমাগারে আলু রাখার জন্য জায়গা পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে পবা উপজেলার রহমান হিমাগারের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে সমস্ত কৃষক এই হিমাগার থেকে বীজ আলু নিয়েছে তাদেরই আলু নেওয়া হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে মিল রেখেই আলুর ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১১
প্রতিনিধি/বিকে