ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ প্রবাহ বেড়ে গত ফেব্র“য়ারিতে রেমিটেন্স প্রবাহ বেশি।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই’১০-ফেব্রুয়ারি’১১) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
আগের অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭৩১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ হিসেবে আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ কোটি ২১ লাখ ডলার।
তবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার হারের সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির এ হার সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানান, আশানুরূপ জনশক্তি রপ্তানি না হওয়া এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশ চাকরি হারানোর ফলে রেমিটেন্স প্রবাহে আশানুরূপ গতি আসছে না।
এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদপে বাস্তবায়ন হলে শিগগিরই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্র“য়ারিতে ৪ কোটি ডলারের কিছু বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও ডিসেম্বর-২০১০ মাসের তুলনায় জানুয়ারি-২০১১ তে প্রায় এক কোটি ডলারের রেমিটেন্স কমে তা ৯৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি দাঁড়ায়। আর নভেম্বর মাসের তুলনায় এ প্রবাহ কমেছে প্রায় ৩ কোটি ডলার।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য যে হারে বেড়েছে তাতে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির এ হারকে বাড়তি বলা যাবে না। কেননা মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে অনেকে ওইসব দেশ ছাড়ার চিন্তা করছেন। অনেকে আবার এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকেই গচ্ছিত টাকা দেশে পাঠানোর ফলে ফেব্র“য়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।
এছাড়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটও রেমিট্যান্স বাড়ার একটি কারণ বলে তিনি জানান।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে রেমিটেন্স এসেছে ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, আগস্টে এর পরিমাণ কিছুটা বেড়ে রেমিটেন্স হয়েছে ৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
তবে সেপ্টেম্বরে এটি আবার কমে এসেছে ৮৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অক্টোবরে আবার বেড়ে রেমিটেন্স এসেছে ৯২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
একই বছরের নভেম্বরে এর পরিমাণ বেড়ে রেমিটেন্স এসেছে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। অথচ ডিসেম্বরে তা আবার কমে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে রেমিটেন্স এসেছে ৯৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। ফেব্র“য়ারিতে এ হার বেড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
এ হিসেবে আগের অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ১৮ কোটি ২১ লাখ ডলার রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি মাসের মতো ফেব্র“য়ারিতেও রেমিটেন্স বেশি এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। তবে সব চেয়ে কম এসেছে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।
এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ৩০ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৬৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে প্রায় ১ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাকরি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা এবং আশানুরূপ জনশক্তি রপ্তানি না হওয়ায় রেমিটেন্সও প্রত্যাশানুযায়ী আসছে না।
দ জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো গেলে এ প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১১