ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডেমরায় বিবি গভর্নর: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য পরিবেশবান্ধব জুতা কারখানা হচ্ছে

টুটুল রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১১
ডেমরায় বিবি গভর্নর: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য পরিবেশবান্ধব জুতা কারখানা হচ্ছে

ঢাকা: পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে যারা এতদিন কাজ করতো, চিত্ত বিনোদন দুরে থাক, মিলতো না সামান্য অবসর। এদের বাসস্থান ছিল বাসের অযোগ্য।

ব্যবসার ছিল না কোনো পুঁজি। সেই সব হতদরিদ্র জুতা-শ্রমিকদের  কাছে এ যেন স্বপ্নের মত। বাসযোগ্য সবুজ পরিবেশে তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জুতা কারখানা।

ঢাকার অদূরে ডেমরার পাইটি বটতলায় ১৭ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (এলএসবিপিসি) অধীনে বাংলাদেশ লেদার সেক্টর বিজনেস সেন্টার (বিএলএসসি)। যাতে অর্থায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। যেখানে থাকছে ২৩০ জন শ্রমিকের থাকার জায়গা, হেলথ সেন্টার, ক্যাফেটরিয়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ চিত্ত বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।

বুধবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান আকস্মিকভাবেই ডেমরার এই প্রকল্পটির অগ্রগতি দেখতে যান। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। পহেলা মে উৎপাদনে যাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের প্রথম আধুনিক জুতা কারখানা। বিদেশে জুতা রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক যেসব শর্ত রয়েছে তার প্রায় সবই পূরণ করা হচ্ছে এই কারখানায়।
 
প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে করা এ প্রকল্পে ১৭ জন উদ্যোক্তাকে ৭ কোটি টাকা স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে মূলধন হিসেবে আর ৪ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা এবং অবকাঠামো নির্মাণে। এছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায়  আরো ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প এলাকা  ঘুরে  দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে তার নজির এই প্রকল্প। ব্যাংকিং খাত পরিবেশ সম্মত ও মানবিক হয়ে উঠছে। অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে তারই প্রমাণ মিলছে। এই প্রকল্প সফল হলে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
 
গভর্নর বলেন, পুরনো ঢাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জুতা শ্রমিকরা কাজ করতো। যেখানে বসার মত জায়গা ছিল না। ছিল না খাবারের জায়গায়। ছিল না বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। অথচ এরাই অর্থনীতির বড় শক্তি।

এ বছর ৪০ শতাংশ বেশি রপ্তানি হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে গভর্নর বলেন, এ প্রকল্পে রপ্তানির শর্ত পূরণ হবে। এমনকি ন্যায্যতাভিত্তিক যে উৎপাদন সেটাও শুরু হবে। যার মূল্য অনেক বেশি। বিশ্বের কাছে জেগে উঠবে অন্যরকম এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য সফলতার গল্প।

তিনি বলেন, এই কারখানাগুলো সরিয়ে ফেলা যায়নি বলেই নিমতলির মত ঘটনা ঘটেছে। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
 
গভর্নর বলেন, আমি আশা করি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ ধরনের গ্রিন ব্যাংকিং দেখতে পাবো। ব্যাংকগুলো হবে মানবিক ও শ্রমিক বান্ধব।
 
প্রকল্পের সমন্বয়ক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘যে স্থানে শ্রমিকরা কাজ করতো তা মোটেই পরিবেশবান্ধব ছিল না। এতে রপ্তানি ক্ষেত্রেও বাধার সম্মুক্ষিণ হতে হতো। এক্ষেত্রে জনতা ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। বিনা জামানতে এদেরকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র  উদ্যোক্তাদের যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তা ১০০ ভাগ আদায় হয়েছে।
 
এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন এমন একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফারুক মিয়া জানালেন, আমরা রপ্তানির সুযোগ পাইনি এতদিন। আর পরিবেশ ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। এখন সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারবো।

প্রকল্পের একমাত্র নারী উদ্যোক্তা রেখা আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে বলে আমরা ভালো পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চাই। ’

বাংলাদেশ সময় ১৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।