ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত অনেকেই

সস্তায় ডলার, সাবধান!

ফিরোজ আমিন সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১১
সস্তায় ডলার, সাবধান!

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার সীমানাবর্তী এলাকাগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে ডলার প্রতারণার রমরমা ব্যবসা চলছে। লোভের ফাঁদে ফেলে ডলার কিনতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।



আইনশৃংখলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকা না থাকায় প্রতারক চক্রের কর্মকাণ্ড দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। আর স্থানীয়রা বিষয়টি জেনেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। তাই প্রতারকরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে সদর উপজেলার বাগেরহাট এলাকার ডলার প্রতারক চক্রের মূল হোতা নজরুল ইসলাম ও তার সঙ্গী ফারুক হোসেন পাশের বীরগঞ্জ এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই এ প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। এ ব্যাপারে পুলিশের খোঁড়া যুক্তি: ‘তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে নানা কৌশলে যোগাযোগ স্থাপন করে সস্তায় ডলার কেনার প্রলোভন দেখায় ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতারক চক্রটি। সস্তায় ডলার কিনতে আসা ব্যক্তিদের প্রথমে নমুনা হিসেবে দু’একটি আসল ডলার দিয়ে প্রতারকরা তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। ফাঁদে পড়া শিকার সাধারণত ওই ডলার নিয়ে যায় যাচাইয়ের জন্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডলার জাল নয় নিশ্চিত হওয়ার পর বেশি পরিমাণের ডলার কিনতে আসে।

এ পর্যায়ে প্রতারকরা প্রথমে ডলার কিনতে আসা লোকদের নিয়ে যায় নির্জন এলাকায় তাদের ভাড়া করা বাসায়। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়।
 
প্রতারণার শিকার মফিজুল হক জানান, তাৎক্ষণিকভাবে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কেউ মিডিয়া, কেউ পুলিশ, কেউ জনপ্রতিনিধি আবার কেউ হন রাকারী। এদের কেউ পুলিশের পোশাক পড়ে ডলার কিনতে আসা লোকদের গ্রেপ্তারের কথা বলে। এরপর হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে থানায় নেওয়ার নাটক সাজায়। এসময় নানান ভয়ভীতির মুখে পড়ে ফাঁদে পড়া ব্যক্তি সর্বস্বের বিনময়ে তাদের খপ্পর থেকে বেড়িয়ে এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন।

আরো জানা যায়, দুর্বৃত্তদের বিরোধিতা করলে তাদের নির্জন এলাকায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে সারাদিন আটকে রেখে গভীর রাতে চোখ মুখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে ছেড়ে দেয়। ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের আশ্রয় নেন না। ফলে এ ধরনের অনেক ঘটনা অজানাই থেকে যাচ্ছে।

এ ঘটনা ঘটছে, ঠাকুরগাঁও সদরের শুকানপুখুরি, চণ্ডিপুর, লীলারহাট, বাগেরহাট, ডি-হাট, ভূল্লি, বালিয়া, লস্করা ও গড়েয়া, পাশ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি এবং পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ঝাঁড়বাড়ি, কালিগঞ্জ, বাহাদুরবাজার ও হাজরাডাঙ্গা এলাকায়।

প্রতারক চক্রের মূল হোতা নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে একটি গ্রুপ। তাদের সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়ে বিরোধ থাকায় এমন অপপ্রচার করছে। ’

তবে তার সঙ্গী ভ্যান চালক ফারুক হোসেন বলেন, ‘এধরণের কাজ অন্যায় আমি এখন বুঝতে পারছি। সুযোগ পেলে আমি ভাল হয়ে যাব। ’

সম্প্রতি ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন লীলারহাটের প্রতারক চক্রের আরেক হোতা রফিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে রফিকুলকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আগে প্রতারণা করতাম, এখন বাদ দিয়েছি। ’

রফিকুল আরও বলেন, ‘আগে প্রতিমাসে দু’একটি করে অপারেশন হতো। এভাবে অনেক টাকা লুটে নিয়েছি। ’

উল্লেখ্য, রফিকুলের ডান হাত ছিল নজরুল ইসলাম। ডলার প্রতারণার টাকা ভগাগাভাগি নিয়ে দু’জনের দ্বন্দ্ব হয়।

এরই জের ধরে নজরুল আলাদা হয়ে ২০জনের একটি দল তৈরি করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়।

গড়েয়া এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী জানান, তার এলাকায় প্রতি মাসে এধরণের ৪ থেকে ৫টি ঘটনা ঘটছে। দু’টি বিশেষ দলের আশ্রয়ে প্রতারক চক্রটি এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, এদের সঙ্গে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কিছু লোকজনেরও সখ্য রয়েছে। ফলে তাদের জ্ঞাতসারেই কর্মকাণ্ড চালিয়েও প্রতারকরা সবসময় থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই।

জাতীয় একটি দৈনিকের স্থানীয় সংবাদদাতা রহমত আরিফ বাংলানিউজকে জানান, ডলার প্রতারণা ব্যবসা করে এই এলাকাসহ আশপাশের অনেকেই আঙ্গুল ফলে কলাগাছ বনেছে। এদের প্রত্যেকেরই আলাদা গ্রুপ রয়েছে। ভয়ে এলাকার মানুষ এসব কর্মকাণ্ড চোখের সামনে দেখেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী গ্রুপের ছত্রছায়ায় এধরণের প্রতারণা চলছে বলে ঠাকুরগাঁও সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল চক্রবর্তী জানান।

তবে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে ওই চক্রের সখ্যের কথা অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘চক্রের ৫০ সদস্যর একটি তালিকা নিয়ে মাঠে কাজ করছে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা। ’

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। বর্তমানে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য প্রায় থেমে গেছে। ’

তিনি জানান, এরই মধ্যে প্রতারকদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। এই চক্রের অন্যতম হোতা রফিকুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর হোতা নজরুলকে গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।