ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১০
২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা

ঢাকা: এরই মধ্যে ২০১৫ সাল নাগাদ প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা করেছে সরকার। একই সঙ্গে ২০২১ সাল নাগাদ ২০ হাজার মেয়াগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরও একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।



জ্বালানি বিষয়ক সংবাদ ম্যাগাজিন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র প্রকাশনার ৮ বছরে পা দেওয়া উপলক্ষে বুধবার সকালে ‘জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

ড. তৌফিক বলেন, ‘২০১৫ সালের মধ্যে জ্বালানি খাতে মহাপরিকল্পনা আপনারা দেখেছেন। এখন ২০২১ সালের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ হচ্ছে। ’

তিনি জানান, সম্প্রতি ম্যানিলায় এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি কনফারেন্স হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশও অংশ নেয়।

এডিবি জানিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তারা ৩ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা করবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ড. তৌফিক এডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘তাহলে আমাদের  ৫‘শ মেগাওয়াটের ব্যবস্থা করো। ’

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এডিবির একটি দল বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য আসবে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুৎ আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে জানিয়ে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘শিগগির নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আলোচনা শুরু হবে। ’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারও আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে আমরা নেব কি-না। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হবে শিগগির। ’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, ‘জ্বালানি উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের মতামত খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাডেমিকদের গ্যাপ রয়েছে। তাই উন্নয়ন বিষয়ে সবাইকে একটি জায়গায় আসতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু এটা বেশি দিন করা যাবে না। তাই আমাদের যত শিগগির সম্ভব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে যেতে হবে। কয়লা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ’

সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ‘গত ৭ বছরে আমরা জ্বালানি খাতে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ সময় কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এ সরকারের আমলে জ্বালানি খাতের একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে এ খাতের সমস্যা দূর হবে। ’

সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ফুলবাড়ীতে কয়লা আছে। তা  উত্তোলন করতে হবে। গুটি কয়েক মানুষের আন্দোলনে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা যাবে না। ’

সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘গ্যাস বা তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা ভাবলে হবে না। এর সঙ্গে বায়ু, সৌর ও জলবিদ্যুৎ নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। একই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে কয়লা উত্তোলন খুবই জরুরি। ’

সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা সেবাগ্রহীতা। আমি নিজে কোনো ধরনের বিশেষজ্ঞ না। রাজনীতিবিদ। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিশেষজ্ঞরা কর্ম পরিকল্পনা করবে। আর আমরা সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণকে সচেতন করব। ’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘কুইক রেন্টালের জন্য যারা কাজ করছেন তারা যাতে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো ধরনের ঝামেলায় না পড়ে সেজন্য বিষয়টিকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। ’

বাপেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুর্তজা ফারুক বলেন, ‘আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। অনেককে আমরা নানা কারণে ধরে রাখতে পারছি না। তারা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে হবে। ’

বাপেক্স সিলেটে কোনো কূপ খনন না করেই একশ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে যোগ করেছে। বুধবার থেকে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১২ নং কূপে ওয়ার্কওভারের কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।

পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তাদির আলী বলেন, ‘গ্যাস সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এলএনজি আমদানি করতে যাচ্ছি। তবে আপাতত অস্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ করতে ৪/৫ বছর সময় লেগে যাবে। ’

তিনি জানান, এলএনজি টার্মিনালের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখান থেকে গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করতে হলে ৩ কিলোমিটার পাইপলাইন বসাতে হবে। পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে।

বুয়েটের কেমিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম এ কাদের বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এ খাতে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার ৪০ শতাংশ কোনো সময়েই বাস্তবায়িত হয় না। অনেক প্রকল্প নেওয়া হলেও আমাদের পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ নেই। ’

মূল প্রবন্ধে বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন জানান, সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা মতে ২০১৫ সাল নাগাদ কয়লাভিত্তিক ২৬০০ মেগাওয়াটের ৪টি কেন্দ্রে ৭৫ লাখ টন কয়লা প্রয়োজন। যা আমদানি করা হবে। এতে টন প্রতি কয়লার দাম পড়বে ১৫০ ডলার। অথচ দেশের কয়লার দাম হবে প্রতি টন ৭৫ ডলার।   এছাড়া তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে বছরে ১১০ থেকে ১২ লাখ টন জ্বালানি তেল লাগবে। আর গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস লাগবে। এই বাড়তি গ্যাস এলএনজি আমদানির মাধ্যমে যোগানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম বেশি পড়বে।

সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ খনন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হলে খনির পুরো কয়লা তোলা যায় না। তাই উন্মূক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে হবে। ’

এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সামিট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক ফয়সাল খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহমান, পিডিবি চেয়ারম্যান এমএম আলমগীর কবির।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪, জুলাই ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।