ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শেয়ার বাজার ধসে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া

কেউ বলছেন সরকার দায়ী, কেউ দুষ্ট চক্র

মান্নান মারুফ/ শামীম খান/ আসাদ জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১১
কেউ বলছেন সরকার দায়ী, কেউ দুষ্ট চক্র

ঢাকা: সম্প্রতি পুঁজিবাজারের ভয়াবহ ধসের পেছনে সরকার দায়ী বলে মনে করছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই পুঁজিবাজারের এ অবস্থার জন্য দায়ী।

উদাহরণ হিসেবে তারা ’৯৬ সালের কথা বলছেন।

অন্যদিকে সরকার দলীয় মহাজোট নেতারা বলছেন, এর পেছনে দুষ্টচক্র জড়িত। তবে সরকারের অকার্যকর ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তারা। আবার কেউ কেউ খোদ বিনিয়োগকারীদেরই দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।  

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারের এ অবস্থার জন্য সরকার দায়ী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধু এখন নয়, এর আগে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর এভাবেই পুঁজিবাজারে ধস নেমেছিল। ওই সময়ও লাখ লাখ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ার মার্কেটের এ অবস্থা হয়।

লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। এর সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও পুঁজিবাজারের এ অবস্থার জন্য সরকারকেই দায়ী করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের ছত্রছায়ায় পুঁজিবাজারে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এটা অন্যায়। সরকারের উচিত এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ’

একই সঙ্গে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তবে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে এ অবস্থা চলতেছে। সরকার কোনও পদপে নিচ্ছে না। কারণ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত। ’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই কথা বলেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ মানুষ পথে বসে গেছে। বেশ কিছু দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। সরকার কোনও পদপে নিচ্ছে না। ’
 
তিনি বলেন, অনেকে সারা জীবনের মূলধন হারিয়ে আত্মহুতি দেওয়ার চেষ্ট চালিয়েছে। বিক্ষোভ করছে । হরতাল দিচ্ছে। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এখন কার কাছে যাবে এ মানুষগুলো?’

তিনি বলেন, এর আগেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখনও শেয়ার মাকের্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ বছরও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সুতারাং এর জন্য সরকারই দায়ী।

তিনি অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘সরকার এর দায় কোনওভাবেই এড়াতে পারবে না। ’
 
তবে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান পুঁজিবাজারের ধসের পেছনে সরকারের কোনও গাফিলতি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বরং এ অবস্থার জন্য বিনিয়োগকারীদের অবিবেচনাকে দায়ী করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সহযোগিতা দিয়ে আসছিল শেয়ার বাজার যাতে ভালোভাবে গড়ে ওঠে। সরকারের কোনও সমস্যার কারণে শেয়ার বাজারের দরপতন হয়নি। এর জন্য বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দায়ী। তারা না বুঝে শেয়ার কিনেছে।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া ষড়যন্ত্রও রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও বলছেন তদন্ত চলছে। শেয়ার বাজারের দরপতনে সরকারের সমস্যা হবে বলে মনে করি না। ’

ষড়যন্ত্র কারা করছে জানতে চাওয়া হলে ফারুক খান বলেন, এখানে নানা মহল কাজ করতে পারে। আমরা দেখছি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। ভাঙচুরের মাধ্যমে তো শেয়ারের দাম বাড়ে না, মার্কেট চাঙ্গা হয় না। ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়।

এ ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুরো কণ্ঠ মেলাতে পারেননি আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা সরকারকে ভাবতে হবে। শেয়ার বাজারের সঙ্গে ৩৩ লাখ মানুষ জড়িত। ৫ মিনিটে ৬ শ’ পয়েন্টের নীচে চলে গেল, ২১ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেল- এর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। ’

তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিশেষ সার্কেল (চক্র) জড়িত। এই দুষ্ট চক্র ভাঙতে হবে। সময় নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এই মুহূর্তেই সমস্যার সমাধান করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে উপশমের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এরপর স্থায়ী সমাধানে মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ’

এক বছর আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ’

তিনি বলেন, ‘শেয়ার মার্কেট কেন সোনার হরিণ হয়ে উঠল? ঘটি বাটি বেচে মানুষ সোনার হরিণের পিছনে ছুটছে, আমরা তাদেরকে ছুটতে দিলাম কেন?’

এর উত্তর সরকারকে খুঁজতে হবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)’র সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতিতে চিহ্নিত করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে দিয়ে ঠিক করেনি। যেখানে তাদের আসতে দেওয়ায় উচিত না, সেখানে তাদেরকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে এই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন প্রচুর পরিমাণ টাকা লাভ করে সব তুলে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন কিছু বলেনি। সুতরাং এটি খুবই স্বাভাবিক সব টাকা তুলে নেওয়ার পর দরপতন ঘটবেই। ’

এ অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় জানতে চাইলে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এখন আবার হিউজ পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করলেই শেয়ার বাজার চাঙ্গা হবে। ’

পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের জন্য সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করা যায় কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি দেখার দায়িত্ব যখন তাদের তখন এখানে অস্বাভিক কিছু ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব তো তাদের নিতেই হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন কিছু কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে যে শেয়ারের দাম একশ’ টাকা সেটি বিক্রি হয়েছে দুশ’ টাকায়। মূলত এসব কারণেই পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। ’

আওয়ামী লীগই এর জন্য দায়ী-বিএনপি’র এ বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সালমান এফ রহমান, লোটাস কামাল, ফারুক খান ও নূর আলীরা যখন পুঁজিবাজারে আসেন তখন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।