চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আপাতত সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বন্দর অ্যাডভাইজরি কমিটির দ্বিতীয় সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভায় শাজাহান খান বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরিচ্যুত আড়াই হাজার শ্রমিককে আবারও চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে, না কি গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হবে এ বিষয়টি বর্তমানে শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ’
স্পর্শকাতর এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এবং বন্দর কর্তৃপ ও ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মতামত নিয়ে ভবিষ্যতে বন্দরে সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সভায় সেনাবাহিনীর প থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হালিম বর্তমানে বন্দরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত রয়েছে জানালেও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়টি বন্দর কর্তৃপ ও ব্যবহারকারীদের মতামতের ওপর নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন।
তবে এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত সাংসদদের কেউই কোনও মতামত দেননি।
উল্লেখ্য, ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ, নৈরাজ্য এবং বার্থ অপারেটরদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিপ্রেেিত গত ১৩ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অপারেশনাল কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সভায় আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সাংসদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র প্রস্তাবের পরিপ্রেেিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপকে ট্রাস্ট অথবা কমিশন হিসেবে পুনর্গঠন। এ বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য তাৎণিকভাবে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।
এতে সাংসদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও শামসুল হক চৌধুরীকে উপদেষ্টা এবং বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমেদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
সাংসদ মইনউদ্দিন খান বাদলের প্রস্তাবে ‘কর্ণফুলী নদী কর্তৃপ’ গঠন। এ বিষয়ে নদ-নদী সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের টাস্ক ফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান নৌ মন্ত্রী।
এছাড়া কর্ণফুলী নদী থেকে নিয়মবর্হিভূতভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদপে নেওয়ার কথাও সভায় জানান নৌমন্ত্রী।
অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ৪৫ জন সদস্যের মধ্যে সিটি মেয়র এম মনজুর আলমসহ অধিকাংশ সদস্যই অনুপস্থিত ছিলেন।
তবে প্রথম সভা বর্জন করলেও দ্বিতীয় সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প থেকে সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীম যোগ দেন।
সভায় মোট ২৭টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিয়ে বিলম্ব এবং বন্দরের টেন্ডারে অনিময় নিয়ে সভায় ােভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের দু’সাংসদ।
সাংসদ মইনউদ্দিন খান বাদল মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অনুমতি দিতে দিতে শীত পার করে ফেলছেন। বর্ষা এলে বলবেন কাজ করা যাবে না। আপনি বর্ষার সময় বাদাম খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নেননি কেন। আমরা আর একদিনও দেরি দেখতে চাই না। ’
টেন্ডারে অনিয়ম প্রসঙ্গে বাদল বলেন, ‘মাল্টিপারপাস ড্রেজার কেনা নিয়ে আপনারা খেয়াল খুশি মতো কাজ করছেন। যদি আপনারা পছন্দের কাউকে সুযোগ দিতে চান তাহলে টেন্ডার প্রক্রিয়াই বাদ দিয়ে দেন। ভূত তাড়াবার জন্য সরিষার দরকার, কিন্তু সরিষার মধ্যে যদি ভূত থাকে সেটা তাড়াবেন কীভাবে?’
সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘টেন্ডারের পর দেখা যায় আপনারা নানান শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। এতে বন্দর নিয়ে নানা বিতর্ক, সমালোচনা তৈরি হচ্ছে। ’
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর এডভাইজরি কমিটির প্রথম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে নেওয়া ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা বৃহস্পতিবারের সভায় অনুমোদন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১১