ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি: শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা

এসএম গোলাম সামদানী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১০
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি: শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা

ঢাকাঃ বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সুফল বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না। এই পদ্ধতিতে বাজারে আসা কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এরইমধ্যে এই পদ্ধতিতে বাজারে আসা ৩টি কোম্পানির শেয়ার কিনে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজির ৬০ শতাংশ পর্যন্ত খুইয়েছেন।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসার আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ায় সেকেন্ডারি মার্কেটে তা কিনে নিঃস্ব হয়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।
 
এরইমধ্যে এ পদ্ধতিতে বাজারে আসা ওশান কন্টেইনার (ওসিএল) ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল), শেয়ার কিনে পুঁজির ৬০ শতাংশ পর্যন্ত খুইয়েছেন হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। সর্বশেষ বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শেয়ার কিনেও একই অবস্থা বিনিয়োগকারীদের। বিপরীতে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে এই পদ্ধতির পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায় ডিএসই ও এসইসি। উভয় পক্ষ থেকে বলা হয় এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি বাজারে আসলে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী উভয়ই লাভবান হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এই পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত ওসিএল ও কেপিসিএল বাজারে আসার আগে শেয়ার প্রতি আয় ছিল যথাক্রমে ২ টাকা ৪০ পয়সা ও ২ টাকা ৭৯ পয়সা। এদের মধ্যে এর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ওসিএল এবং কেপিএল এর প্রতিটি শেয়ার বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারিত হয় যথাক্রমে ১৪৫ টাকা ও ১৯৪ টাকা। এতে করে কোম্পানি দুইটির পিই রেশিও হয়ে যায় ৬০ ও ৬৯।   যা বাজারের গড় পিই রেশিও‘র প্রায় আড়াই গুন।

গত ৪ মার্চ ওসিএলের লেনদেন শুরু হয়। এর মধ্যে প্রথম চার দিন এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার দাম গড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করে। সর্বশেষ ১৩ জুলাই ওসিএল এর প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ মাত্র ১৪৫ টাকায় লেনদেন হয়।

অন্যদিকে গত ১৮ এপ্রিল কেপিসিএল বাজারে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম চার দিন এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ২৬০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে গড় লেনদেন হয়। সর্বশেষ ১৩ জুলাই মঙ্গলবার এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয় মাত্র ১৩৮ টাকা। এদের মধ্যে ওসিএল লেনদেন শুরুর চার মাসের মাসের মধ্যে দাম কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ এবং কেপিসিএল এর দাম কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে ১৪ জুন বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা তৃতীয় কোম্পানি আরএকে সিরামিকসের লেনদেন ২০০ থেকে ২৩৫ টাকার মধ্যে লেনদেন হলেও সর্বশেষ ১২ জুলাই ১৭০ টাকায় লেনদেন হয়। মাত্র ১মাসের কম সময়ে এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

আইপিওতে না আসায় প্রথম তিন কার্যদিবস সাধারন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে পারলেও বিক্রি করতে পারেননি। পরবর্তীতে দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে হয়। এমনকি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই কোম্পানি তিনটির শেয়ারের দাম কমা অব্যাহত রয়েছে। এতে করে যারাই এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনেছেন তারা সবাই বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

বিশ্বের অনেক স্টক মার্কেটে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চালুর শুরুতেই নানা ধরনের বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এই পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের জন্য অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতেই কোম্পানির ফান্টামেন্টালের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে।
এসইসির আইন অনুযায়ী বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোস্পানির মূল্য নির্ধারণের (ইন্ডেকেটিভ প্রাইজ) জন্য ৩ ক্যাটাগরির কমপক্ষে ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন বাধ্যতামুলক। যারা প্রাথমিক অবস্থায় ওই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করবে। প্রতিষ্ঠান কারা নির্ধারণ করবে তা আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না।

ফলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া কোম্পানি নিজেই তাদের পছন্দের ৫টি মূল্য নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করতো। আর এসব প্রতিষ্ঠান ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি পরস্পর যোগসাজসে কোম্পানির মৌলভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে শেয়ারের দাম নির্ধারন করে।

আর এই ক্ষেত্রে দাম নির্ধারনকারী প্রতিষ্ঠান কোম্পানির শেয়ারের দাম যত বেশিই নির্ধারণ করুক না কেন তাদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। ফলে তারা ইচ্ছামাফিক দাম নির্ধারন করেছে।

এই নিয়ে প্রশ্ন উঠায় সম্প্রতি সম্প্রতি এসইসি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কিছুটা সংশোধনী এনেছে। ততোদিনে বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা কোম্পানি তিনটি হাতিয়ে নিয়েছে।    

এ ব্যাপারে এসইসির সদস্য মো. মনসুর আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, শুরুতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাইজ নির্ধারণে কিছুটা সমস্যা ছিল। যার কারণে কোনো কোনো কোম্পানির প্রাথমিক মূল্য যুক্তিসঙ্গত ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি এই পদ্ধতির কিছুটা সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আরো স্বচ্ছতা আসবে।

অন্যদিকে চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফকরউদ্দিন আলী আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতি ভালো হলেও বাংলাদেশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে সংশোধনী আনায় আগামীতে আর বির্তক হবে না বলে মনে করছি।    

বাংলাদেশ সময়:০৯৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।