ঢাকা: শতরঞ্জি। পরিচিত নাম কার্পেট।
মূলত রংপুরে এ শতরঞ্জি তৈরি হতো। কিন্তু, পাটশিল্পের নাজুক অবস্থা এ শিল্পটিকেও টিকে থাকতে দেয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ শিল্পের শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে যুক্ত হয়েছেন রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন পেশায়।
সেইসব তাঁতশ্রমিকদের ধরে রেখে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মূল উৎপাদনের ৯০ শতাংশ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। বছরে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আসে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার প্রথম দিন থেকেই হাতেগোনা যে ক’টি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে তার একটি ‘শতরঞ্জি’। নয়নাভিরাম গ্রামীণ অবকাঠামো সাজানো এ প্যাভেলিয়নটিতে প্রতিদিনই সকাল থেকে লেগে থাকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। আর বিকেলে তো কথাই নেই।
শ্যামলীর বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বললেন, ‘রংপুর আমার বাড়ি। ছোটবেলা বড়দের কাছে এ শতরঞ্জির কথা অনেক শুনেছি। আজ একটা কার্পেট আর একটা পাপোস কিনে নিলাম। আগেও কিনেছি এখান থেকে। ’
‘এদের পণ্যগুলো ভালো। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই একটি পার্স কিনলাম। দেখতেও সুন্দর। ’ Ñবললেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টুম্পা চৌধুরী।
কার্পেট দেখতে দেখতে মিরপুর থেকে আসা গৃহিণী রোখসানা খন্দকার বললেন, ‘শতরঞ্জির মান অনেক ভালো। দামেও অনেক কম। তাই দেখছি কোনটা কেনা যায়। ’
মেলায় ভিন্ন ভিন্ন উপকরণে তৈরি বিভিন্ন আকৃতি, নকশা ও মাপের শতরঞ্জি ছাড়াও পাপোস, টেবিলমেট, ওয়ালমেট ও মেয়েদের পার্স নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্পূর্ণ হাতে বোনা ও পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের মূল্যও সবার হাতের নাগালে।
ওলের শতরঞ্জি ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা, শ্যানেলের কার্পেট ২৫০ থেকে তিন হাজার, ঝুট ও পাটের তৈরি কার্পেট ২০০ থেকে দুই হাজার, আর শুধু ঝুটের কার্পেট রয়েছে ১৫০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। পাপোস পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়।
ছয় মিসের টেবিলমেট ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঁচ পিসের ১২৫ থেকে ৬৫০ টাকা ও চার পিসের সেটের মূল্য পড়বে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ওয়ালমেট রয়েছে ৫৭০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। আর ৪০ টাকা থেকে ২৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পার্স।
মেলা অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ঢাকা) আলতাফ হোসেন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মূলত দেশের বাইরেই রপ্তানি করে থাকি। ৯০ শতাংশই যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বাকিটুকু স্থানীয় বাজারে ছাড়া হয়। দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে তাদের ক্রয়সাধ্যের মধ্যে থাকা এ পণ্যের প্রচার বাড়াতেই মেলায় এসেছি। ’
তিনি বলেন, ‘মানুষ অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে তৈরি কার্পেট কিনে থাকে। অথচ গ্রামের দক্ষ নারীশ্রমিকদের হাতে আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের শতরঞ্জি। ’
তিনি জানান, এক সময় এ শতরঞ্জি শুধু পাট দিয়ে তৈরি হতো। এখন পাটের সুতা পাওয়া যায় না বলে বিভিন্ন বর্জ্য, কচুরিপানা, পোশাকশিল্পের ঝুট, ভুট্টার খোসা, গম গাছের খোসা, কলাগাছের বাকল, পুরনো সোয়েটার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। কোনও ধরনের রাসায়নিক পদার্থের স্পর্শ্ব ছাড়াই এগুলো বোনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১১