ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির দায় এড়ানো যাবে না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১১
‘অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির দায় এড়ানো যাবে না’

ঢাকা: শেয়ারবাজারের ভয়াবহ বিপর্যয় রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘন ঘন বৈঠক, নানা  সান্ত্বনা আর অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসেও বিশ্বাস করতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ার বিনিয়োগকারীরা। অব্যাহত দরপতনের কারণে নিজেদের পুঁজি হারানোর আশংকায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।



শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগকারীরা গত কয়েকদিন বিক্ষোভ, ভাংচুর, অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে হাজির হন। সর্বস্ব হারানোর আতংকে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, আবার কেউ কেউ জানান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

তারা শেয়ার বাজারে হাজার হাজার মানুষের পুঁজি লুটে নেওয়া চক্রের সন্ধান ও দরপতনের মূল কারণ খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘ভূয়া আশ্বাস আর সান্ত্বনা দিয়ে মানুষজনকে আরও বেশি ঠকানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। ’

তারা বলেন, ‘অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর দোষ চাপিয়ে পুঁজিবাজারের কেলেঙ্কারির দায় এসইসি এড়াতে পারবে না। ’

টঙ্গীর মরকুন এলাকা থেকে আগত স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আরিফ আহমেদ (৩৮) মাত্র আড়াই মাস আগে ডিএসই’র শেয়ার বাজারে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। তিনি কেয়া ডিটারজেন্ট, এইচআর টেক্সটাইল, বিডি ওয়েল্ডিং, সায়হাম টেক্সটাইল, এপেক্স স্পিনিংসহ মোট ৬টি কোম্পানির শেয়ার  কেনেন। এর মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের বড় ধরনের দরপতন ঘটে। ফলে সীমাহীন হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক আরিফ আহমেদ।

তিনি জানান, গোটা পুঁজির মধ্যে মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকা তার নিজের, বাকি ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। আরিফ আহমেদ বলেন, ‘চারদিন ধরে মতিঝিলের রাস্তায় আছি, রাস্তাতেই খাচ্ছি-পুঁজি খোয়ানোর পর আমার নিজের জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষের এতো ধারদেনা আমি কিভাবে শোধ  দেবো ভেবে পাচ্ছি না। ’

মিরপুর বাংলা কলেজের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের আজিজ, মঞ্জুরুল, মুন্না, কাননসহ সহপাঠী ১৫ বন্ধু একত্রে শেয়ার ব্যবসায় নেমে মোটা অংকের টাকা গচ্ছা দেওয়ার মুখে পড়েছেন। তাদের কয়েকজন নিজেদের পরিবার থেকে ও বাকিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে পুঁজি সংগ্রহ করে দুটি কোম্পানির ৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনেন। কোম্পানি দুটি হচ্ছে, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও এইচআর টেক্সটাইল। দরপতনের ধকলে তাদের প্রায় অর্ধেক পুঁজি লাপাত্তা হয়ে গেছে, বাকি অর্ধেক পুঁজি তুলতে পারবেন কি না তা নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

শেয়ারে বিনিয়োগকারী ছাত্র সাহাদৎ হোসেন মুন্না বলেন, ‘কোনো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিকে আমরা চিনি না। আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আর বাজারে শেয়ার ব্যবসায় যুক্ত থাকা কোম্পানিগুলোর কথা জানি। স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায় ইউনিপেটুইউ বা ডেসটিনি ২০০০ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। ’

বিনিয়োগকারী অপর ছাত্র রাজিব হোসেন কানন বলেন, ‘মার্কেটের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের ওপর খামোখা দোষ চাপিয়ে মূলত শেয়ার বাজারের কেলেংকারী ধামাচাপা দেওয়ারই পাঁয়তারা চলছে। ’

শেয়ার বাজার আবার চাঙ্গা হওয়ার কথা উল্লেখ করে রাজিব প্রশ্ন তুলেন, ‘বিক্ষোভ-ভাংচুর হলেই পতন শেয়ারের দামও বাড়তে থাকার নজির অন্য কোথাও আছে কি ?’

বাংলাদেশ সময় : ১১০৬ ঘন্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।