ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আল্টিমেটামের মেয়াদ শেষ: রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ায় অগ্রগতি নেই

সোহেল রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১০
আল্টিমেটামের মেয়াদ শেষ: রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ায় অগ্রগতি নেই

ঢাকা : পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের আল্টিমেটামের মেয়াদ রোববার শেষ হয়েছে। তবে সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও গত ছয় মাসে নতুন কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে আসেনি।

এজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
 
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিতের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। বাখরাবাদ গ্যাস, পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন, হোটেল সোনারগাঁও, এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি, শিপিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এ তালিকার প্রথম সারির কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

বৈঠকে ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ছাড়ার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এগুলোকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করারও ঘোষণা দেওয়া হয় উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠক থেকে।

সে অনুযায়ী ১১ জুলাইয়ের মধ্যেই পুঁজিবাজারে আসার বিষয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পুরো ছয় মাস পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে।
 
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)’র সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে না আসার পেছনে আমলাতান্ত্রিক এক ধরনের বাধা ও জটিলতা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে গত ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর সরকারি নীতি নির্ধারণের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রায় ৫৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিসমূহ, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
 
এরপর গত চার বছরেরও বেশি সময়ে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও প্রকৃত কাজ তেমন এগোয়নি।

তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর হাতেগোণা কয়েকটি এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে এসেছে। এগুলো হচ্ছে- ডেসকো, পাওয়ার গ্রিড, তিতাস, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)’র হিসাব অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছেড়ে সরকার এরই মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। মূলত অবকাঠামোগত ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেই এ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়লে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।      

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে এখন অর্থের কোন সংকট নেই। সংকট শুধু ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে এলে একদিকে বাজারে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, অন্যদিকে সরকারেরও ঋণ নির্ভরতাও কমবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে শিল্প মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মত দেন অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান। তিনি বলেন,  মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।

এ ক্ষেত্রে এসইসি’র উদ্যোগেরও ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসইসি’র করণীয় হচ্ছে- তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বার বার তাগিদ দেওয়া এবং প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। ’

একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে সর্বোপরি ‘সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকেরও দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন’ বলেও মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১০৩৫ ঘন্টা, ১১ জুলাই, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।