ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভয়াবহ ধসে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ, বিক্ষোভ, লাঠিপেটা, সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক

এসএম গোলাম সামদানী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১
ভয়াবহ ধসে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ, বিক্ষোভ, লাঠিপেটা, সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক

ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ ধসে সোমমবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, মিরপুর, সাভার ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ করে বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে।



সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরুর মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যে সাধারণ মূল্য সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৩৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট পড়ে ৬ হাজার ৪৯৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে নেমে আসে। এটি ছিল পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতন।

এর আগে রোববার ডিএসইতে সাধারণ মূল্য সূচক ৬০০ পয়েন্ট কমে যায়। এটিও ছিলো পুঁজিবাজারে দরপতনের রেকর্ড।  

সোমবার লেনদেন শুরুর মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইতে রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হলে সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বন্ধ করে দেয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে একসঙ্গে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বন্ধ করে দেয়া ছিল প্রথম ঘটনা। লেনদেন বন্ধ করার পর বিনিয়োগকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে রাস্তায় নেমে আসে। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে।

এসময় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সামনে  এবং বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, টিকাটুলি থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত এলাকায় দৃশ্যত হরতালের মতো অবস্থা বিরাজ করে। সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

এসময় ওইসব স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় এবং বেশক’টি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
 
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিনিয়োগকারীরা ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। এসময় কেউ কেউ ছাদ থেকে হাতে লেখা লিফলেটও ফেলেন। অনেক বিনিয়োগকারীকে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতেও শোনা যায়। তারা অর্থমন্ত্রী, এসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন।

অবশ্য বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে। এতে অন্তত শতাধিক বিনিয়োগকারী আহত হয়েছেন।

তিনটার পর পুলিশ মাইকিং করে বিনিয়োগকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা সেখান থেকে সরে যায়নি।

এদিকে, পুলিশের বেপরোয়া হামলা রেহাই পাননি সমবায় ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকরাও।

সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই ঠিক ১২টা ১৫ মিনিটে পুলিশ হঠাৎ সাংবাদিকদের লাঠিপেটা শুরু করে। এতে আমাদের অর্থনীতির মাসুদ, এবিসি রেডিওর সীমা ভৌমিক, শীর্ষ নিউজ’র মর্তুজা, প্রথম আলোর ওয়ারিস আহত হন।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, লেনদেন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে এবং নগরীর কামাল খান এলাকায় প্রেস কাবের সামনে শত শত বিনিয়োগকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখানে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের পদত্যাগ এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। এছাড়া ইউনিপেটুইউ ও এসপিক এশিয়াসহ সব ধরনের এমএলএম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও দাবি জানান বিুব্ধ বিনিয়োগকারীরা।

সাভার থেকে আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জাহিদুর রহমান জানান, চারটি ব্রোকারেজ হাউজের হাজারখানেক বিনিয়োগকারী দরপতনের পর রাস্তায় নেমে আসেন। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তবে পুলিশ দ্রুত তাদের সরিয়ে দেয়।
 
সোমবার দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম কমে ২১৯টির এবং বাড়ে মাত্র ৪টির। ওই সময় পর্যন্ত লেনদেনর পরিমাণ দাড়ায় ৪০০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

এদিকে বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসইসি’র পক্ষ থেকে মঙ্গলবার উভয় পুঁজিবাজারে স্বাভাবিকভাবে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মার্জিন লোনের পরিমান ১:১.৫ থেকে বাড়িয়ে ১:২ করার সিদ্ধান্ত ও নেটিং সুবিধা চালু করার ঘোষণা দেয় এসইসি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।