ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো বাণিজ্য-কূটনীতির হাতিয়ার

আনোয়ারুল করিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১০
পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো বাণিজ্য-কূটনীতির হাতিয়ার

ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিকে বাণিজ্য কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ‘নিউ পার্টনারশিপ ফর ট্রেড অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অ্যাক্ট (এনপিটিডিএ) ২০০৯’ বিলে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে দেন-দরবার চালিয়ে আসছে।

শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা আরো জোরালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে ঢাকা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলে পোশাক  শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো কোনো সমস্যা হবে না।

পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এনপিটিডিএ বিলে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে গত চার মাস ধরে সরকার ও পোশাক শিল্প মালিকরা যুক্তরাষ্ট্রে লবি করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল গত এপ্রিলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

সর্বশেষ গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে শুক্তমুক্ত প্রবেশাধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন।

প্রতিনিধিদল কংগ্রেসের এনপিটিডিএ বিল সংক্রান্ত ‘ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটি’কে জানান, শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বাড়তি কোনো আর্থিক চাপ ছাড়াই শ্রমিকদের জন্য মজুরি বাড়াতে পারবে। কারণ বাংলাদেশের জন্য পণ্যমূল্য প্রতিযোগিতামূলক রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।    

এনপিটিডিএ বিলটি পাসের জন্য আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ওঠানো হবে।  

ওয়াশিংটনে লবি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস গত সপ্তাহে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, ‘আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছি, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ করছে সরকার। ’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে রপ্তানি বাজার সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। এজন্য আমরা তাদের বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকপণ্যের প্রবেশ শুল্কমুক্ত করা হলে তা পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে সহায়ক হবে। ’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত বিলটির ভাগ্য যাদের হাতে সেই ‘কংগ্রেস কমিটি অন ওয়েজ অ্যান্ড মিনস’-এ বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নাজুক। এই কমিটি বাংলাদেশকে ‘সর্বনিম্ন মজুরি প্রদানকারী দেশগুলোর একটি ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ২০০৬ সালে বেতন নির্ধারণ করা হয় ১৬৬২.৫০ টাকা (প্রায় ২৫ ডলার)। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কমিটি মনে করে, এ বেতন জীবনযাত্রার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খরচের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া বাংলাদেশের শ্রমিকদের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ করার অধিকারও খুবই সীমিত।

সূত্র দাবি করে, এনপিটিডিএ বিলের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে হলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোসহ সংগঠন করার অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে এনপিটিডিএ বিলটি উত্থাপনের জন্য গত বছরের নভেম্বরে নথিভুক্ত হয়। বিলটির প্রস্তাবক সিনেটর ম্যাকডারমট। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের জন্য ১৯৭৪ সালে প্রণীত ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সংশোধন করে নতুনভাবে ‘শুল্কমুক্ত সুবিধালাভের যোগ্য দেশ’ বাছাই করাই এনপিটিডিএ বিলের উদ্দেশ্য। বিলে বাংলাদেশসহ ১৫টি উন্নয়নশীল দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব করা রয়েছে। জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ ১ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে।  

পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)’র সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী শনিবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার না পেলে বাংলাদেশকে অসম তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে মন্দার কারণে এমনিতেই তৈরি পোশাকের ক্রয়মূল্য পড়ে গেছে। কিন্তু সুতাসহ কাপড়ের দাম বাড়ছে। এর ওপর রয়েছে দেশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট। এসব কারণে মূল্য নির্ধারণে আমরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। ’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর তৈরি পোশাক-পণ্যের মাত্র এক শতাংশ প্রচলিত জিএসপি পদ্ধতির আওতায় রপ্তানি হয়েছে। বাকি ৯৯ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গেছে গড়ে ১৫.২ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ১০ জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।