ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বসুন্ধরা সিটি: জানুয়ারি থেকে সব দোকানে এক দর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১০
বসুন্ধরা সিটি: জানুয়ারি থেকে সব দোকানে এক দর

ঢাকা: ‘এবার দোকানদাররা সব ঠিক হয়ে যাবে। অতিরিক্ত লাভ রাখতে পারবেন না।

ঠকাতে পারবেন না ক্রেতাদেরও। বসুন্ধরা সিটি কর্তৃপক্ষ এ জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ’

বলছিলেন উত্তরার বাসিন্দা লিসা চৌধুরী। এসেছেণ দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে। সেই সুবাদে সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়।

শ্যামলী থেকে আসা সৈয়দ দাইয়ান উদ্দিনের ভাষায়, ‘শপিংয়ের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো জায়গা হলেও মাঝেমধ্যে কিছু দোকানদার অনেক বেশি দাম রেখে মার্কেটের বদনাম করে ফেলে। নতুন নিয়ম করায় এখন আর তা করতে পারবে না। ’

বসুন্ধরা সিটিতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সব দোকানে এক দরে (ফিক্সড প্রাইস) পণ্য বিক্রি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৬ ডিসেম্বর দোকানদারদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক চিঠিতে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বসুন্ধরা সিটিকে এক দামের বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা এবং বার্ষিক মূল্যহ্রাস বা ডিসকাউন্ট কার্নিভাল সংক্রান্ত বিষয়াবলী নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন এবং ১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত শীতকালীণ মূল্যহ্রাস বা ডিসকাউন্ট কার্নিভাল থাকবে। এ দু’টি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিক্রেতারা হ্রাসকৃত মূল্যে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে। অবশ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এ সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবেন।

মিরপুর থেকে আসা ওমর ফারুক মিঠু ও ফারজানা ফারুক দম্পতি বললেন, ‘আমরা সব সময় ফিক্সড প্রাইসের দোকান থেকে কেনাকাটা করি। এতোদিন এ সুযোগ সীমিত ছিল। এখন সব দোকানে ফিক্সড প্রাইসের নিয়ম করায় কেনাকাটার গণ্ডি বাড়লো। ’

বললেন, ‘ফিক্সড প্রাইসের দোকান হলে দরদাম করে সময় নষ্ট করতে হয় না। পছন্দ হলো, দাম দিয়ে নিয়ে নিলাম। কোনও ঝামেলা নেই। ’

কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেন দোকানিরাও।

লেভেল-২এর জেন্টল ব্রিজের ব্যবস্থাপক নাসির চৌধুরীর মতে, এক শ্রেণীর ক্রেতা, বিশেষ করে মহিলারা সবসময়ই দর কষাকষি করতে পছন্দ করেন। এমনকি ফিক্সড প্রাইসের দোকানে ঢুকেও তারা অভ্যাস ছাড়তে পারেন না। এরপরও বলবো, খুব ভালো হয়েছে। ঝামেলা কমবে, সময় কম লাগবে, যদিও ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করা খুব কঠিন। অনেকে পণ্য বদলাতে এসে আরেকটি পছন্দ হয় না বলে টাকা ফেরত চান। অনেক ভদ্র ও শিক্ষিত লোকও এটা করেন।

দোকানীরা সৎ না হলে এই ফিক্সড প্রাইস ধরে রাখা কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একই ফোরের কাকলী ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী মো. সুমন মনে করেন, এ ব্যবস্থা ক্রেতাদের জন্য অনেক ভালো হবে। মার্কেটের সুনামও বাড়বে।

লেভেল-৩এ অবস্থিত চয়নিকা’র ব্যবস্থাপক শামীম কবির বললেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। হয়রানি কমবে, ক্রেতার সঙ্গে কথা কম বলতে হবে। বিভ্রান্ত না হয়ে ক্রেতারাও খুশি মনে পণ্য কিনবে। আর তাদের খুশি মানেই তো আমাদের খুশি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দর কষাকষি করলে হয়তো বেশি লাভ নিতে পারতাম। এতে হয়তো ক্রেতা সবসময় খুশি নাও হতে পারে। ’

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এক দরে পণ্য বিক্রি করে আসা লেভেল-৪এর শাড়ী কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন খোকন কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ বলে।

তার মতে, এটি বসুন্ধরা সিটির জন্য অনেক সুনাম বয়ে আনবে। তবে পণ্যের গায়ে ‘ফিক্সড প্রাইস’ লাগিয়েও যেন কেউ ছাড়ে বিক্রি করতে না পারে সেদিকে কর্তৃপক্ষকে কড়া নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তা করতে না পারলে মার্কেটের মর্যাদা কমবে। ’

বললেন, ‘ফিক্সড প্রাইস চালু করলে স্বাভাবিকভাবেই দোকানে লোকবল কম লাগে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর খরচও কমবে, ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) ভঙ্গ হবে না। ক্রেতার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হবে না। এভাবে এক সময় মার্কেটের প্রতি তাদের প্রবল বিশ্বাস জন্মাবে। ’

তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তিন থেকে ছয় মাস কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের কষ্ট করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা সিটি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কয়েকদিন পরে যেতে বলেন।

শপিং মলের গুণগতমানের উন্নতির জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বসুন্ধরা সিটির সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) কামরুল মেহেদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্য না থাকায় অনেক সময় ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি করে থাকেন এবং পণ্যের কোয়ালিটি মেইনটেইন (মান নিশ্চিত) করা সম্ভব হয় না। এসব নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হয়। ক্রেতারা বিভ্রান্ত হন। ’

তিনি বলেন, ‘এখন বিক্রেতারা যেন তেন প্রাইস লাগাতে পারবেন না। আকাশচুম্বি লাভ করতে পারবে না। যেহেতু সব দোকানেই পণ্যের গায়ে দর লেখা থাকবে সেহেতু কেউ ইচ্ছা করলেই বেশি রাখতে পারবেন না। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে তর্ক, ভুল বোঝাবুঝি হবে না। ’

নতুন নিয়ম তদারকির জন্য ব্যবস্থাপকের (প্রশাসক) নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে আন্ডারটেকেন (মুচলেকা) না দেওয়া পর্যন্ত দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। কমিটির বাইরে আমরাও নিয়মিত তদারকি করব। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ক্রেতারা অভিযোগ করলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটা ক্রেতারাও জানেন। আমরা জোর প্রচারণাও চালাচ্ছি। তাই এ নিয়ম বাস্তবায়নে কোনও সমস্যা হবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।