ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী চট্টগ্রাম চেম্বার পরিষদ

হাজেরা শিউলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১০
চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী চট্টগ্রাম চেম্বার পরিষদ

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচনে অর্ডিনারি ও অ্যাসোসিয়েটেড গ্রুপে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছে বর্তমান সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এমএ লতিফের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম চেম্বার পরিষদ গ্রুপ।

এই দুই গ্রুপের ১৮টি পরিচালকের পদে সবকটিতে চেম্বার পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

এর ফলে ট্রেড গ্রুপের একটি পদ ছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪টি পরিচালক পদের মধ্যে ২৩টিতে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে চেম্বার পরিষদ।

এছাড়া নির্বাচনের আগে ট্রেড গ্রুপের ছয় জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। ২০১১-১২ সাল মেয়াদে তারাই চট্টগ্রাম চেম্বার চালাবেন।
 
এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যে দিয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয় বহুল আলোচিত ও ঐতিহ্যবাহী এই চেম্বার নির্বাচন।

নানা নাটকীয়তার পর হাইকোটের নির্দেশে সকাল ৯টায় নগরীর আগ্রাবাদে চেম্বার হাউসে ভোট গ্রহণ শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল চট্টগ্রাম ব্যবসায়ী পরিষদ। হাইকোটের নির্দেশ লঙ্ঘন করে নমিনী ভোটারের মাধ্যমে ভুয়া ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

এদিকে ভোট গণনা শেষে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজমুল হক চৌধুরী রাত সাড়ে ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

এ সময় সুশৃংঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ফলাফল ঘোষণার সময় চেম্বার পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী বর্তমান সভাপতি এমএ লতিফ এমপিসহ সব প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের কেউ ছিলেন না।
 
ফলাফল ঘোষণার পর নাজমুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘নমিনি ভোটের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিল তা ঠিক নয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে এবং হাইকোর্টের আজকের চূড়ান্ত রায়েও সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। ’

৬ হাজার ৬ শ’ ১২ ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৬৪২ জন। যা মোট ভোটের প্রায় ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ডিনারি গ্রুপে ভোট পড়েছে ২ হাজার ৬৮টি, অ্যাসাসিয়েটেড গ্রুপে পড়েছে ৩১০৭টি। ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল জানতে নির্বাচনে সক্রিয় থাকা চেম্বার পরিষদের প্রার্থীরা বিকেল থেকে চেম্বার হাউসে অবস্থান করছিলেন।  

এর আগে নমিনী ভোটের নামে ভুয়া ভোটার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ী পরিষদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়। এরপর এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সে সুবাদে আজ মঙ্গলবার  নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার রাতে দুই পক্ষই হাইকার্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও মঙ্গলবার সকালে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না-- অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় ব্যবসায়ী পরিষদ।

নির্বাচনে অর্ডিনারি গ্রুপ থেকে নির্বাচিত চেম্বার পরিষদের ১২ জন পরিচালকের মধ্যে এশিয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং  চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি  মোহাম্মদ আব্দুস সালাম ভোট পেয়েছেন ১৭৫২,  মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ও চেম্বারের বর্তমান পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন আলম ১৭২৬, বায়েজিদ অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী ১৭৩০, ইউনিব্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিক ভুঁইয়া ১৭১৫, কম্পোর্টস শিপিং লাইন্স লি. এর মালিক ক্যাপ্টেন শফি চৌধুরী ১৭১৯, আরিফ অ্যান্ড  অ্যাসাসিয়েটের মালিক মোরশেদ আরিফ চৌধুরী ১৬৯২, মোহাম্মদ নুরুন নেওয়াজ সেলিম ১৭৩৮, মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী ১৭১৬, আব্দুল্লাহ আহসান ১৭২৭, শেখ মাহফুজ হামিদ ১৬৮৮, মোহাম্মদ হাবিবুল হক ১৬৮৪, জাহিদ হোসেন মিঞা ১৬৮২ ভোট।
 
অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েট গ্রুপের নির্বাচিত ছয় পরিচালক মাহবুবুল আলম ভোট পেয়েছেন ১৩০৩, এসএম মাহবুবুল ইসলাম টুক ১২৬১, ছৈয়দ ছগীর আহমেদ ১৩৭১, মাহফুজুল হক শাহ ১২৫৯, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর ) ১২৮১ ও মোহাম্মদ অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন পেয়েছেন ১২২৪ ভোট।

এদিকে নির্বাচনের আগে ট্রেড ও টাউন গ্রুপ থেকে ছয় জন পরিচালক পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। এর মধ্যে  ৫ জন পরিচালকই চেম্বার পরিষদের ও ১ জন ব্যবসায়ী পরিষদের।

পরবর্তী সভাপতি কে হচ্ছেন

চেম্বার পরিষদের প্যানেল লিডার চেম্বার পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী এমএ লতিফ ও অধিকাংশ পরিচালকের সমর্থন থাকায় প্যানেল লিডার ও বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম চট্টগ্রাম চেম্বারের পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আব্দুস সালাম নিজের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার পসিবিলিটি আছে, যদি পরিচালকরা চান। বুধবার পরিচালকরা বসে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন করবেন বলে জানান।
 
তবে কে পরবর্তী সভাপতি হবেন, এ ব্যাপারে নির্বাচিত পরিচালকরা সরাসরি কারো নাম বলতে চাননি।

আগামীকাল প্রথম বোর্ড সভায় সভাপতি ও সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সিনিয়র সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি হিসাবে ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব গুণ এবং সরকারি-বেসরকারি মহলে পরিচিতির কারণে আব্দুস সালামই  পরবর্তী সভাপতি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
ফল ঘোষণার পর চেম্বার পরিষদের পক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্যানেল লিডার আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের এবং জনগণের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে অতীতের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত করতে নির্বাচিত পরিচালকরা ওয়াদাবদ্ধ থাকবেন। আগামী দু`বছরে চেম্বার চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের পরাজিত প্রাথীরা সহযোগিতা করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চেম্বারের প্রেসিডিয়াম তথা নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করতে হবে। তাদের সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হবেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরবর্তী সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি ও সহ-সভাপতি।    

বাংলাদেশ সময় : ২২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০১০ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad