ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বিগ্ন বাজার বিশ্লেষকরা

এস এম গোলাম সামদানী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১০
পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বিগ্ন বাজার বিশ্লেষকরা

ঢাকাঃ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পুঁজিবাজারের উর্ধ্বগতি। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শেয়ারের দাম।

গত দুই দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাধারণ সূচক বেড়েছে ২৩৪ পয়েন্ট। এই সময়ে বেশির ভাগ কোম্পানির বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজারের এই অস্বাভাবিক ঊর্ধগতি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একের পর এক সিদ্ধান্ত নিলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বরং সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবরে প্রথম দিন বাজারে সামান্য মূল্য সংশোধন হলেও পরদিন সূচক দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাচ্ছে।

বাজারে চাহিদার তুলনায় শেয়ারের সরবরাহ কম হওয়ার কারণেই এটি হচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত। তাদের মতে চাহিদার তুলনায় শেয়ারের সরবরাহ কম থাকায় বাজার ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে একসময়ে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।  

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এটি আগের দিনের চেয়ে ১১৪ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৮ হাজার ৮৩৮ দশমিক ১০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। যা একদিনে সর্বোচ্চ সূচক।

এদিন লেনদেন হওয়া ২৩০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২০টির এবং কমেছে ১০৭ টি ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩ টি কোম্পানির শেয়ার।

বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি সর্ম্পকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওসমান ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজার অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটবে।

বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখিতার কারণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের অতিরিক্ত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীর নতুন নতুন কলকারখানায় বিনিয়োগ না করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। এতে করে বাজারে নগদ অর্থের সরররাহ বেড়ে গেছে। বাজারে যে হারে নগদ অর্থ আসছে সে তুলনায় শেয়ারের সরবরাহ বাড়ছে না। তাই বেশির ভাগ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। সেই সঙ্গে বাজারে প্রতিনিয়ত নতুন বিনিয়োগকারী প্রবেশ করছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব বিনিয়োগকারী ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

তিনি বলেন, বাজারের লাগাম টেনে ধরতে হলে এই মুর্হুতে বাজারের সব ধরনের মার্জিন লোন বন্ধ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের যে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করছে তা দ্রুত সময়ে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অন্যথায় শিগগিরই হয়ত এমন অবস্থা হবে শেয়ার বিক্রি করার লোকই শুধু থাকবে, কিন্তু কেনার লোক থাকবে না।
 
ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ঢাকা বিশ্ব্িবদ্যালয়ের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এই ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা যদি সর্তক না হয় তাহলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে পারে।

অন্যদিকে বাজারের ঊর্ধগতি সর্ম্পকে চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফকরউদ্দির আলী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে দাম বাড়ার হিড়িকে মৌলভিত্তির (ফান্ডামেন্টাল) শেয়ারগুলোর দাম এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, সেগুলোও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই বিনিয়োগকারীদের সাবধানে বিনিয়োগ করা উচিত। তিনি বলেন, বাজারে এখন সব ব্যাংকের শেযার কেনাও আর নিরাপদ নয়। কারণ অনেক ব্যাংকও এখন ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে গেছে। এইক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বুঝে শুনেই বিনিয়োগ করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়ঃ ১৮১০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad