ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেড় যুগেও হয়নি এসইসির জনসংযোগ বিভাগ

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১০
দেড় যুগেও হয়নি এসইসির জনসংযোগ বিভাগ

ঢাকা: প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) হয়নি জনসংযোগ বিভাগ। এতে করে সময়মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।



সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশের (সিডিবিএল) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের পুঁজিবাজারে প্রায় ২৫ লাখ বিনিয়োগকারী সম্পৃক্ত। তাদের দৈনন্দিন তথ্যুধা মেটাতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নিজস্ব ওয়েবসাইটের বাইরে দু’একটি প্রকাশনা থাকলেও এক্ষেত্রে এসইসি অনেকটা পিছিয়ে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এসইসি। এর প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোতে ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস’ নামে একটি বিভাগ থাকলেও এর কার্যক্রম ওয়েবসাইটেই সীমাবদ্ধ। ফলে ইন্টারনেট বা তথ্য-প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এসইসি’র কার্যক্রম সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে যান।

উল্লেখ্য, সাধারণ জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ বিভাগ করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে গঠিত তথ্য কমিশনেও রয়েছে জনসংযোগ বিভাগ।

এসইসি’র ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সংস্থায় চেয়ারম্যানের দপ্তর ছাড়াও ১৪টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলোÑ প্রশাসন ও অর্থ, ক্যাপিটাল ইস্যু, ক্যাপিটাল মার্কেট রেগুলেটরি রিফর্মস অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি সিস্টেম, কর্পোরেট ফাইন্যান্স, ইনফোর্সমেন্ট, ল’, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অ্যান্ড স্পেশাল পারপাস ভেহিকল, রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড লাইসেন্সিং, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব মার্কেট অ্যান্ড ইস্যুয়ার কোম্পানি, সুপারভিশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব ইন্টারমিডিয়েটার্স ও সার্ভেইলেন্স বিভাগ। এছাড়া পুুঁজিবাজার পরিচালন ব্যবস্থার উন্নয়নে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রকল্প।

প্রতিটি বিভাগই পুঁজিবাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা তেমন কিছুই জানেন না।

এদিকে, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে বিনিয়োগকারীরা এসইসি কার্যালয়ে যান। কিন্তু তথ্য জানার বা অভিযোগ উত্থাপনের নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ না থাকায় তাদের শূন্য হাতেই ফিরতে হয়। শুধু আন্দোলন বাঁধলে মাঝেমধ্যে এসইসি’র কর্তৃপক্ষের সাক্ষাত পান তারা।

সাম্প্রতিককালে এইমস ফার্স্টের লেনদেন বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের অনেককেই এসইসি’র কার্যালয়ের পনেরো তলায় প্রধান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হলেই এ বিষয়ে লিখতে অনুরোধ করেন তারা।

শফিকুল ইসলাম, আবদুল করিম, বজলুর রহমান, আবদুল হালিম, তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান, আবুল হাসনাতসহ বেশ ক’জন নিয়মিত বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এসইসির অনেক সিদ্ধান্তের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কোনো বিষয়ে জানতে ওই কার্যালয়ে গেলে একেকজন একেকজনের কাছে পাঠিয়ে দেন। কেউ কিছু বলতে চান না। ’

এদিকে, নির্দিষ্ট বিভাগের অভাবে জরুরি খবর নিশ্চিত করতে বা তথ্য সংগ্রহে সংবাদকর্মীরাও হিমশিম খান। গত দেড় বছর ধরে এসইসি’র মনোনীত মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কবির ভূঁইয়া যা বলেন তা-ই মূলত ভরসা। তবে তার চাপ কমাতে গত মাসে আরেক নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকেও মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত করে কমিশন।

কমিশনের প্রেস ব্রিফিং নিয়েও সাংবাদিকদের অভিযোগ আছে। প্রায়ই একঘণ্টা বা মাত্র আধঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনে ব্রিফিংয়ের কথা জানানো হয়। স্বল্প সময়ের নোটিশে অনেকেই ব্রিফিংস্থলে পৌঁছাতে পারেন না।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড মামলা, ঋণ, মূল্য-আয় অনুপাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি এসইসি’র নানা পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তথ্য নিয়ে এসইসি’র লুকোচুরি বাজারে ব্যাপক গুজবের জন্ম দেয়। বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদও প্রকাশিত হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি বিনিয়োগকারীদের উপরই পড়ে।

পুঁজিবাজারবিষয়ক গণমাধ্যমকর্মীদের মতে, এসইসি’র সিদ্ধান্তগুলো এক ব্যক্তি বা বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ করলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। অনেক বিস্তৃত এ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জনসংযোগ বিভাগ না থাকা দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে এসইসি’র মুখপাত্র আনোয়ারুল কবির ভূঁইয়া ‘জনসংযোগ বিভাগের লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে’ বলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।