ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

লন্ডনে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মেলন ও বিজনেস শোকেইস

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০
লন্ডনে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মেলন ও বিজনেস শোকেইস

লন্ডন: বাংলাদেশ ব্র্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) উদ্যোগে লন্ডনে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ‘মিট বাংলাদেশ: এশিয়ার পরবর্তী বৃহৎ সুযোগ’ শীর্ষক এক সম্মেলন ও বিজনেস শোকেইস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেকেন্ড কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশকে নিয়ে এই সম্মেলন ও বিজেনস শোকেইসের আয়োজন করা হচ্ছে।



যুক্তরাজ্যের স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাসহ সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে তাদেরকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর উদ্দেশে এ সম্মেলন ও বিজনেস শোকেইসের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বাইরে এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম।

বিবিএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে বর্হিবিশ্বে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা নিরসন করা, যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা জোরদারকরণ, যুক্তরাজ্যের মূলধারার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও যৌথ উদ্যোগ বাড়ানো (ব্যবসা-বাণিজ্য, মিডিয়া বা গণমাধ্যম ও থিঙ্কট্যাঙ্ক বা গবেষণা সংস্থাসমূহ) এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ও বিনিয়োগ-বাণিজ্যের ওপর জোর দিয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশী তথা যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও যৌথ উদ্যোগ জোরদারকরণই এ ধরনের আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য।

বাংলাদেশ গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিক থেকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বছরে ৫ শতাংশের ওপরে এবং বিগত ৭/৮ বছর ধরে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। জেপি মরগ্যান এর মতো বিশ্বখ্যাত সংস্থাও বাংলাদেশকে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিচারে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’ শীর্ষক তালিকায় পাঁচটি দেশের একটি হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাচ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ জেমস ও নেইল এর ভাষায়- বাংলাদেশ হচ্ছে ব্রিক-এর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় ‘নেক্সট ইলেভেন’ বা ‘পরবর্তী ১১টি দেশের’ অন্যতম একটি।

স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর বা এসঅ্যান্ডপির মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশকে সভ্রেন ক্রেডিট রেটিং বা সার্বভৌম ঋণমান নির্ণয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে।

সম্মেলনে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ও বহুজতাকি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগ-বাণিজ্যে আকৃষ্ট করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তায় বিপুল শ্রমের সহজলভ্যতা বা সরবরাহের সুবিধা রয়েছে, এদেশের আছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের একটি বড় বাজার এবং ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাধে এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষের একটি সুবিশাল আঞ্চলিক বাজারের সুবিধাও রয়েছে এখানে।

সম্মেলন ও বিজনেস শোকেইস আয়োজনের স্থান হিসেবে লন্ডনকে বেছে নেওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ হিসেবে বিবিএফ বলছে, এই শহরটি ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত ও পরিচিত হওয়ায় অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাাদের কাছে এই আয়োজনের তথ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে।

দ্বিতীয়ত, দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের জন্য সর্ববৃহৎ দাতাদের অন্যতম একটি হল যুক্তরাজ্য। গত ২০০৯ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) গেছে এই দেশ থেকে।

তৃতীয়ত, সফল অনাবাসী বাংলাদেশী (এনআরবি) নাগরিকদের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সফল ও শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হয় যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা।

আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, এই সম্মেলন ও শোকেইসকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রথম পর্বে বাংলাদেশের ঋদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বিনিয়োগ-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী তথা খাবার-দাবার, পর্যটন শিল্প এবং সর্বোপরি জনজীবন ইত্যাদি তুলে ধরা হবে।

এছাড়া আলাদা প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, সফটওয়্যার/তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, চামড়া ও ওষুধ শিল্প প্রভৃতি খাতের চালচিত্র, সম্ভাবনা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

দ্বিতীয় ভাগে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের যেসব খাতে বৈচিত্র্য এসেছে সেগুলো এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অর্জনসমূহ তুলে ধরা হবে।

তৃতীয় ভাগে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে।

লন্ডন সম্মেলন ও শোকেইস উপলে স্থানীয় এশিয়া হাউসে এক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও থাকবে। যেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ও চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে বলে জানিয়েছে আয়োজক সংস্থা।

এই সম্মেলন ও শোকেইস উপলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে এই সম্মেলন ও শোকেইস অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জি এম কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্যাসিস, এশিয়া হাউস, ইউকে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (ইউকেটিআই), ব্রিটিশ কাউন্সিল, স্যাৎচি এ্যান্ড স্যাৎচি, লন্ডন চেম্বার অব কমার্স, ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপ, ফিশনেট, এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনারস, দ্য বব নেটওয়ার্ক, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, কমনওয়েলথ বিজনেস কাউন্সিল ও ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এই আয়োজনে অংশীদার হয়েছে।

আয়োজক সংস্থা আরও জানিয়েছে, বেক্সিমকো, রহিমআফরোজ, অটবি, এসএসডিটেক, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), এসিআই ও জেমকনের মতো প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেবে।

বাংলাদেশের দুটি প্রথম সারির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এ মেলার স্পন্সর হচ্ছে।

এছাড়া গোল্ড স্পন্সরদের মধ্যে রয়েছে- এসিআই, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন, অটবি, রহিমআফরোজ, এসএসডি-টেক এবং রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সিলভার ক্যাটেগরিতে স্পন্সর হয়েছে জেমকন গ্রুপ, ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, প্যাসিফিক জিনস লিমিটেড ও এনার্জিপ্যাক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।