ঢাকা: সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া বলে দাবি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যায় লালবাগের পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।
চামড়ার দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলাম সেটি ছিল লবণসহ দাম। সাতশ থেকে আটশ টাকা যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটি লবণ ছাড়া। বিগত বছর ধরে যে দামে বিক্রি হতো এই দাম তার থেকে বেশি।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা অসত্য। অসত্য এজন্য যে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী যাদের চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারা চামড়া নিয়ে আধা পচিয়ে ফেলছে। আধা পচা চামড়া সাতশ-আটশ টাকা বিক্রি হলে তো এটা অনেক বেশি। আর যেটা ভালো চামড়া সেটি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা যে কাজটা শুরু করি তা হলো স্থানীয়ভাবে মজুত এবং লবণ দেওয়াকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ উপযোগী ও মজুত উপযোগী করা। এর ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় একটা স্থিতি এবং বাজারের চাহিদা ও সরবারহের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন চামড়া ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে। জাতীয়পর্যায়ে আমরা একটি কন্ট্রোলরুম করেছি। সেখানে ২৪ ঘণ্টা চামড়া ব্যবস্থাপনা মনিটরিং হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে যেটা লবণ দেওয়া চামড়া। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সেটা বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ও মেইনস্ট্রিমের কিছু মিডিয়াও ভুল তথ্য প্রচার করছে। চামড়া পচে গিয়েছে এমন একটি তথ্য দেখলাম চিটাগাং এর রাঙ্গুনিয়ার। একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী ৬২০টির মতো চামড়া নিয়ে এসেছেন, তিনি চামড়াটি সংরক্ষণ উপযোগী করেননি।
চামড়াটি আধা পচে গেছে। এটা নিয়ে একটি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে চামড়ার বাজারে আবারও একটা ধস নামানোর পরিকল্পনা করছেন।
সরকার উদারভাবে লবণ দিয়েছে শুধু উপযোগী করার জন্য। সব দায় সরকারের ওপর দিয়ে দিলে চলবে না আপনি যদি আপনার নিজের দায়িত্ব পালন না করেন আকাঙ্ক্ষা করাটাও শোভনীয় নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকার সক্ষমতা তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। লবণ লাগিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে উপযুক্ত দাম চান আমি আশা করি, উপযুক্ত দামই পাবেন। আমি আশা করছি, তার চেয়েও বেশি দাম পাবেন।
সরকার চাহিদা তৈরির জন্য কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। প্রণোদনার ২২০ কোটি টাকা ছাড় করিয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলায়, উপজেলায়, গ্রামে মসজিদে মসজিদে লবণ পৌঁছে দিয়েছে। এখন এর সঙ্গে সবার সংযুক্ত হতে হবে।
এককভাবে সরকারকে দায়ী করে কিছু ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়িয়ে চামড়ার বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা ন্যক্কারজনক কাজ হবে বলে- যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, চামড়ার দাম গতকালের তুলনায় আজকে বেড়েছে। আশা করছি, লবণযুক্ত চামড়ার দাম আগামীকাল আরও বাড়বে।
আমরা চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে দুই থেকে তিন মাস চামড়া ধরে রাখতে (সংরক্ষণ) পারবেন। ধরে রেখে উপযুক্ত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি না করার আহ্বান জানান তিনি।
আমরা চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং এতিমদের হক আদায়ের উদ্দেশ্যে এটাকে উপযোগী করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছি। এবার শিক্ষা থেকে আগামীতে রাজনৈতিক সরকার আমার ধারণা আরও বেশি কিছু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জিসিজি/এএটি