ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইডকল যে কোন ভালো উদ্যোগে বিনিযোগে আগ্রহী: মনিরুল ইসলাম

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
ইডকল যে কোন ভালো উদ্যোগে বিনিযোগে আগ্রহী: মনিরুল ইসলাম

ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) মহাব্যবস্থাপক এস এম মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ইডকল যে কোন ভালো উদ্যোগে বিনিযোগে আগ্রহী। আমরা আইটি, অবকাঠামো, যে কোন ধরনের উন্নয়ন উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে চাই।

নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও পুরনো উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য প্রস্তত।

সম্প্রতি পান্থপথের ইউটিসি বিল্ডিংয়ে ইডকলের হেড অফিসে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মনিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার লক্ষিপুরে। বড় হয়েছেন খুলনায় শিক্ষক বাবার সাথে। খুলনা আজম খান কর্মাস কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স ও মাস্টার্স। তারপর  এমবিএ করেছেন।

প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এ ক্যারিয়ার শুরু। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পে কাজ করেন। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে কাজ করছেন ইডকলে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যপারে তিনি জানান, ইডকলের যাত্রা শুরু ১৯৯৭ সালে । এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রাইভেট সেক্টরে অবকাঠামো উন্নয়নে নিযোজিত একটি কোম্পানি। মূলত বেসরকারি সেক্টরে অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক সাহায্য করে থাকে এই কোম্পানিটি।

প্রতিষ্ঠানটি ভৌত অবকাঠামো যেমন পাওয়ার জেনারেশন, গ্যাস, তেল, টেলিকম, আইসিটি, টোল রোড ব্রিজ, ফ্লাইওভার, হাইওয়ে প্রভুতি সেক্টরে বিনিয়োগ করে থাকে।

মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) একটি লাভজনক কোম্পানি।

নতুন উদ্যোক্তা তৈরির ব্যপারে তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে উদ্যোক্তা তৈরিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। গণমাধ্যম জনগণকে সচেতন করতে প্রধান ভুমিকা পালন করে বলে  তিনি মনে করেন।

মনিরুজ্জামান বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেইসঙ্গে কর্পোরেট জগতের লোকরা প্রতি মূহূর্তে নিজেদের প্রয়োজনে অনলাইনে চোখ রাখে। এমনকি দৈনিক পত্রিকার কাগজের প্রিন্টের চেয়ে পত্রিকার অনলাইন পাঠক বেশি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম নতুন প্রজন্মকে নতুন নতুন শিল্প উদ্যোগের ধারণা দিতে পারে। তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন কোন শিল্পের আইডিয়া নিয়ে আসলে ইডকল সহযোগিতার জন্য প্রস্তত। অবকাঠামো ও আইটি সেক্টরে বিনিযোগের জন্য ইউকল আগ্রহী। এজন্য নতুন উদ্যোক্তা ও অনলাইন গণমাধ্যম মিলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।  

বর্তমানে বিকল্প জ্বালানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তি আসছে। আমরা আশা করছি ইডকল জ্বালানি ক্ষেত্রে যে সব উদ্যোগ নিচ্ছে সেগুলো জ্বালানি সংকট থেকে দেশের উত্তরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়ন করেছি। আগামীতে আরো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য সেবা খাতে সহায়তা করা হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে দেড়লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছি।

ব্যায়োগ্যাসের ব্যপারে তিনি বলেন,  ইডকল বাযোগ্যাস প্ল্যান্টের আকারভেদে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়ে আসছে। এ প্ল্যান্ট নির্মাণ করলে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে পুরো খরচ উঠে আসে। একটি প্ল্যান্ট প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ব্যবহার করা যায়।

তবে এ সুযোগ পেতে ইডকলের মনোনীত ৩০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে।

ইডকলের মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন হলে অনুদানের পাশাপাশি ৫ বছরের নির্মাণ গ্যারান্টিও দেওয়া হচ্ছে। কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের কারণে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড (ধোঁয়া) উৎপন্ন হয়। এতে বিশ্বে প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়। এ প্ল্যান্ট ব্যবহার করলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।

পরিবেশ রক্ষার ব্যপারে তিনি বলেন, জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার ফলে উজার হচ্ছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ এবং কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা। এ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব একইসঙ্গে এর বর্জ্য উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশে ৬২ ভাগ আবাদী জমিতে প্রযোজনীয় জৈব পদার্থ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি আদর্শ চাষযোগ্য জমিতে ৩ দশমিক ৫ ভাগ জৈব পদার্থ প্রয়োজন। কিন্তু রয়েছে ১ দশমিক ৭ ভাগেরও কম। দেশে সব বাড়িতে প্ল্যান্ট  স্থাপন করতে পারলে জিডিপিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। একেকটি বায়োগ্রাস প্ল্যান্টে প্রতিবছর ৬ টন জৈবসার পাওয়া যাবে।

বিদ্যুৎ সেক্টরের ব্যপারে তিনি বরেন, প্রাইভেট সেক্টরের ১ হাজার মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াটে কোন না কোনভাবে ইডকল যুক্ত। এছাড়াও সামিটের প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকা, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে, বারকাতুল্লাহ ইলেক্ট্র ডায়নামিক পাওয়ার, কোয়ান্টার পাওয়ার সিস্টেমস এর নওয়াপড়া ভেড়ামারায় ১০০ কোটি, টাকা ইপিজেড, শাহ সিমেনটের পাওয়ার প্রজেক্টে ১২ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন পাওয়ার প্লান্টে বিনিয়োগ করেছে। ।

টেলিকম নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সিটিসেল, গ্রামীণ ও বাংলালিংকে আর্থিক সহযোগিতা করেছে। ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবার জন্য বাংলালায়নকে ১০০ কোটি টাকা। আইটি আইজি, বাংলাট্রাক, কমিউনিকেশন ইন্টারন্যারাল গেটওয়েতে বিনিয়োগ করেছে। র‌্যাংকসটেলে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

ইন্টারনেটের জন্য ফাইবার আট হোম ইন্টারনেট কান্টেটিভিটির জন্য ২৬ কোটি টাকা। ডিএনএস সেটকমস্যাটেলাইট আর্থস্টেশন, টেরিস্টোরিযাল সাবমেরিন কেবল অ্যাসার ভি স্যাট ও ব্যাক আপ সার্ভিসসহ দুটি প্রাইভেট পোর্ট হিলি ও সোনমসজিদ ব্যবস্থাপনায়ও ইডকল বিনিয়োগ করেছে।  

এখন আমাদের মুলধন ১২০ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা অনেক বড় ব্যপার। আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে বিনিয়োগের জন্য অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকি।  

আয়ের উৎস্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, সরকার ও নিজস্ব আয় থেকে আমাদের তহবিল গঠন করা হয় ।

তিনি জানান, নবাযণযোগ্য শক্তি খাতে বিশ্বব্যাংক, আইডিবি ও জাইকা ১৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে পারে এ ব্যপারে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি এ অর্থ আমরা শিগগিরই পাবো।

তিনি জানান, অপারেশন লেভেলে অনেক প্রজেক্ট সত্বেও দুটো প্রোগামকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একটি হলো সোলার হোম সিস্টেম প্রোগ্রাম। প্রজেক্ট আরেকটি জাতীয় গার্হস্থ্য বায়োগ্যাস ও জৈবসার কর্মসুচি।

এ পর্যন্ত ১৬ লাখেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি করেছে ইডকল। আমাদের পার্টনারদের মাধ্যমে এই কাজ সম্ভব হয়েছে। এখন গড়ে প্রতিমাসে কমপক্সে ৬০ হাজার সোলার সিস্টেম লাগানো হচ্ছে। আমাদের কাজ হচ্ছে কোয়ালিটি রক্ষা করা।

পার্টনার ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কাজ করছি। সোলার প্রোগ্রামে আমাদের পার্টনারদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, প্রশিক্ষণ, অর্থায়ণ, যন্ত্রপাতির মান রক্সা ও নিয়ন্ত্রণই আমাদের কাজ।

যে কোন কোম্পানি আমাদের কাছে বিনিযোগের জন্য আবেদন করতে পারে। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি সেটি যাচাই বাছাই করে সুপারিশ করলে আমরা বিনিযোগ করি। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. রেজোয়ার খানের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিযে এই কমিটি গঠিত।

আইটি সেক্টরের ব্যপারে তিনি বলেন, আইটি সেক্টরে বেসিসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ব্যাংক আইটি সেক্টরে কোন লোন দেয়না। আমরা বলেছি প্রজেক্ট নিযে আসতে ।

আইটি সেক্টরের ব্যাপারে বিনিযোগের জন্য আমরা কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তখন প্রিমিয়ার ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক বিনিযোগ করতে চেয়েছিলো। কিন্ত তারা কাজ করেনি। প্রিমিয়ার বাংক প্রথম করলেও পরে আর করেনি।

তিনি বলেন, ব্যাংক বিনিয়োগের বিষয়টিকে জটিল করে ফেলেছে তাই এখন নিজেরা করছি। ক্লিক হাউস নামে একটি কোম্পানি অ্যানিমেশন এক্সপোর্ট করে। তাদেরকে বিনিয়োগ করবো। আরেকটা প্রতিষ্ঠান ডিএনএস ব্যাংক সলিউশন ও ইউটিলিটি বিল সফটওয়্যার প্রজেক্ট আছে। আমরা এসব আইটি ফার্মে বিনিযোগ করবো।

আইটি খাতের সুবর্ণ সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশি বা বিদেশি কোম্পানির যে কোন ওয়ার্ক অর্ডার থাকলে আমরা অবশ্যই বিনিযোগ করবো। আমরা আইটি সেক্টরকে দেশের ভবিষ্যৎ একটি অন্যতম প্রধান সেক্টর মনে করি।

ইডকল নিজেও আইটি সেক্টরে দক্ষ লোককে নিযোগ দিয়ে থাকে। আমরা সব কাজ সম্পন্ন করি অটোমেশন ও অনলাইনে। আমরা গ্রিন টেকনোলজিতে বিশ্বাস করি।

লোনের ব্যপারে তিনি বলেন, আমরা যেসব লোন দিয়েছি তা সহজশর্তে মাত্র ৬ ভাগ সুদ্ । ক্রম হ্রাসমান সুদ ভিত্তিক সুদে লোন দিচ্ছি। ১০ বছরের জনন্য অবকাঠামো উন্নয়নে যে কোন প্রতিষ্ঠান লোন নিতে পারে।

এ ব্যপারে তিনি বলেন, আমাদের লোন নেবার পর দুই বছর শোধ করতে হবেনা। ১৬ টি কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ আছে। উন্নয়ন প্রকল্পের  মোট খরচের শতকরা ৮০ ভাগ আমরা লোন হিসেবে দিবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।