ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সীমান্ত হাট’ স্থাপনে ঢাকা-দিল্লি সমঝোতা স্মারক সই

তীর্থঙ্কর ঘোষ, দিল্লি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১০
‘সীমান্ত হাট’ স্থাপনে ঢাকা-দিল্লি সমঝোতা স্মারক সই

নয়াদিল্লি: বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ‘সীমান্ত হাট’ স্থাপনে শনিবার দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল ও নেপালের পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের ব্যাপারে দু’টি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তিও হয়েছে।



বর্ডার হাট সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো. রুহুল আমিন সরকার। ভারতীয় পক্ষে ছিলেন সেদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অরবিন্দ মেহতা।    

অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস) হোসেন আহমেদ এবং ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব কাস্টমস’র কমিশনার পি এস প্রুথি দু’টি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তিতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।

দিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তি দু’টি স্বাক্ষরিত হয়। এসময় সফররত বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এবং ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা উপস্থিত ছিলেন।

দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে দুই বাণিজ্যমন্ত্রী বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন। ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে। পরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ভারতের মেঘালয়ে দু’টি এবং বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে দু’টি বর্ডার হাট স্থাপিত হবে।

দুই দেশের সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সপ্তাহে একদিন বসবে বর্ডার হাট। একজন ব্যক্তি হাট থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ডলারের পণ্য কিনতে পারবেন।

দেশ দু’টির সরকার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি হাটের কার্যক্রম তদারক করবে।

বর্ডার হাটে লেনদেনের ক্ষেত্রে দুই দেশের মুদ্রাই ব্যবহার করা যাবে। সীমান্তের দশ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত এবং ঘরে তৈরি পণ্য এই হাটে বেচাকেনা হবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ রয়েছে।

এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি ও উদ্ভিদজাত পণ্য, মসলা, কম প্রচলিত কিছু বনজ পণ্য, তাজা এবং শুঁটকি মাছ, গবাদিপশু, মৎস এবং পোল্ট্রি পণ্য, কুটির শিল্প, কাঠ ও বেতের আসবাব, তাঁত ও হস্তশিল্পজাত পণ্য। তবে কাঠ বিক্রি করা যাবে না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বর্ডার হাটে কেনাবেচার ক্ষেত্রে কোনো করারোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশ তাদের উত্তরপূর্ব সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপনে সম্মত হয়।  

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পৌঁছায়। দিল্লিতে পৌঁছার পর ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলেছি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করছি এবং এই বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ’
 
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৯-১০ সালে ভারত থেকে ৪শ’ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে । বিপরীতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৩৩ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৩শ’ ৬০ কোটি ডলার।

দিল্লি সফরে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের এজেন্ডার একটি হচ্ছে বর্ডার হাট। এছাড়াও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তিও হতে পারে এ সফরে। সফরে ২০০৮ সালের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ব্যাপারেও আলোচনা হতে পারে। ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে ভারত।    

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশ চলতি বছর নির্ধারিত কোটার তুলনায় আরও বেশি পোশাক ভারতে রপ্তানি করতে আগ্রহী। ফলে বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি সফরে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারেও অগ্রগতি হতে পারে।  

ফারুক খানের সঙ্গে আলোচনায় ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানান, দুই দেশ এরই মধ্যে একশ কোটি ডলারের এলসি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া বাল্ক পাওয়ার ট্রান্সমিশন এগ্রিমেন্ট এবং এনটিপিসি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাবরুম এবং রামগড়ের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশের ফেনীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ফারুক খান ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডিাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, পরিচালক এ এ মোমেন, সার্ক চেম্বার সভাপতি আনিসুল হক, বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আর্দাশির কবির প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।