ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অতিথি আপ্যায়নে দই

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
অতিথি আপ্যায়নে দই ক্রেতাদের কাছে দই বিক্রি করছেন দোকানি। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: ঈদে অতিথি আপ্যায়নে শেষ মুহূর্তে সবাই ছুটছেন মিষ্টান্ন সামগ্রীর দোকানগুলোতে। তবে এসব দোকানে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে দই।

এই কারণে মিষ্টান্নের দোকানে দই ঘিরে ভিড় লেগেছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

স্বাদ, মান, জনপ্রিয়তা ও সুখ্যাতি রয়েছে বগুড়ার দইয়ের। দেশজুড়ে রয়েছে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি। এ জেলার দই স্বাদে ও গুণেমানে অনন্য। যদিও এ দইয়ের জন্মস্থান শেরপুর উপজেলা। এ কারণে এখানকার গৃহিণীরা অতিথিকে খ্যাতির দই দিয়ে আপ্যায়ন করানোকে অনেকটা গৌরব মনে করে থাকেন।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দইসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। আর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের কারণে দুধের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আর দই তৈরির প্রধান উপাদানই হলো দুধ। এ কারণে দুধের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্যান্য সময়ের মতো সীমিত লাভ ধরেই তারা দই বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদে অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টি অন্যতম। বগুড়ায় মিষ্টি দইয়ের পাশাপাশি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাদা দই। অতিথি আপ্যায়নে দইয়ের বিকল্প নেই বলেই বগুড়ার দই দিন দিন হয়ে উঠেছে আত্মীয়তার সেতুবন্ধন। ঈদ ছাড়াও রমজান মাসেও চাহিদা থাকে দইয়ের। দিনভর রোজা পালন শেষে ইফতারিতে অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠছে বগুড়ার দই। ঠাণ্ডা শরবত ও ঘোল পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

জানা যায়, বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায়। কথিত আছে, গত শতাব্দীর ৬০ এর দশকের দিকে গৌর গোপাল পাল নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সরার দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা ছিল না। গৌর গোপালের এই দই-ই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারের কাছে এ দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সেসময়ে এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ির দই। কালে কলে দিন গড়িয়ে গেলেও এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে ধরে রেখেছে দই।

এদিকে ঈদকে ঘিরে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইট মিট ও দই ঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ির রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, মিঠাই, রফাত দইঘর, দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথায় মহরম আলী, শেরপুর দই ঘর, চিনিপাতাসহ অর্ধশত শো-রুমে ব্যাপক পরিমাণ দই বিক্রি হচ্ছে। আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত দই ঘর, শেরপুরের রিপন দধি ভান্ডার, সাউদিয়া, ফুডভিলেজ দই, জলযোগ, বৈকালী ও শুভ দধি ভান্ডার থেকেও প্রচুর দই বিক্রি হয়।

মহরম আলী প্লাসের ব্যবস্থাপক হানজালাল বাংলানিউজকে জানান, এখন ঈদ মার্কেট। বগুড়ার মানুষ মিষ্টি খুব পছন্দ করেন। এজন্য বর্তমানে বেচাবিক্রি বেড়েছে। প্রতি পিস স্পেশাল সরা দই ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২০ টাকা, বাটি দই ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, ক্ষিরসা ৩৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা, চমচম, মৌচাকা, কালোজাম (বড়) মিষ্টি প্রতিকেজি ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪০ টাকা, কালোজাম (ছোট) ৩১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪০ টাকা, রাজভোগ ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, সন্দেশ বিভিন্ন আইটেম ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে শহরের নামের খ্যাতি ছড়ানো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দইসহ এসব মিষ্টান্ন সামগ্রীর দাম কেজিপ্রতি আরও ২০-৩০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।

ক্রেতা মইনুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম, জানু বেগম বাংলানিউজকে জানান, মিষ্টান্ন সামগ্রীর দামে তেমন একটা হেরফের নেই। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি করা হলেও ব্যবধান খুব একটা না। দইয়ের বেলায় চিত্রটা বেশ ভিন্ন। অনেক দোকানেই প্রতি সরা স্পেশাল দই ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ দই ২৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা।

তারা বলেন, ঈদে প্রতিটি বাড়িতে চলে ভালো রান্নার আয়োজন। সেই সঙ্গে পরিবার ও আত্বীয়-স্বজন নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। এমন উৎসবে দই বিয়োগ মানা অসম্ভব। তাই দই কিনতে শহরে প্রবেশ করেছেন তারা।

মহরম আলী দই ঘরের পরিচালক মোহাম্মদ নিয়ামুল ওয়াকিল বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ সন্নিকটে এলেই দুধের দাম বেড়ে যায়। এখন প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৯০-১০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। আর দই তৈরির প্রধান উপাদানই হলো দুধ। যে কারণে দুধের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে অন্যান্য সময়ের মতো অল্প লাভ ধরেই আমরা দই বিক্রি করছি।

উল্লেখ্য, বগুড়ার বিখ্যাত সরার দই গত বছর ২৫ জুন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বগুড়ার সরার দইকে জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে বগুড়ার দই বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে এটির মর্যাদা যেমন বাড়বে, তেমনি রপ্তানিতেও সুবিধা মিলবে। জিআই স্বীকৃতি এই পণ্যের মান ও দাম নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।