ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজস্ব আহরণ সাযুজ্যপূর্ণ করতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
রাজস্ব আহরণ সাযুজ্যপূর্ণ করতে হবে

ঢাকা: রাজস্ব বোর্ডের ওপর চাপ দিয়ে এখন আর রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। রাজস্ব বৃদ্ধি করতে হলে রাজস্ব প্রশাসন শক্তিশালী করা, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার, অটোমেশন ও রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি দূর করার তাগিদ দিয়েছেন  অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা।

তারা বলেন, দেশের রাজস্ব ও মোট দেশজ উৎপাদনের (ট্যাক্স-জিডিপি) অনুপাত মাত্র ৮ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি ব্যয় জিডিপির ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বাকি অর্থ ঋণ করে ব্যয় করা হয়। দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।

বুধবার (২৭ মার্চ) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত  ‘কানেন্টিং ফিসক্যাল পলিসি চেঞ্জেস টু ইকোনমিক আউটকাম: এভিডেন্স ফ্রম কুয়ান্টিটিভ এক্সচেঞ্জ‘ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পিআরআই চেয়ারম্যান জায়দি সাত্তারের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. বজলুল হক খোন্দকার। বনানীতে সংস্থাটির কার্যালয়ে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে ট্যক্স এক্সামশনের (কর অব্যাহতি) মাধ্যমে সরকারের ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়। কারা কোথায় কীভাবে সুবিধা নিচ্ছে, এটা স্পষ্ট করা হয় না। সঠিক তথ্যও দেওয়া হয় না। প্রয়োজনীয় সংস্কার, আধুনিকায়ন ও দুর্নীতি দূর এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল রাজস্ব ব্যবস্থার যে বিশ্লেষণ করেছে, সেটা আগামী বাজেটে কাজে লাগিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, এই উদ্যোগের পুরোপুরি ফল আসতে তিন চার বছর লাগবে। আর এটা নিশ্চিত করতে হলে এ আগামী বাজেটেই শুরু করতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের তাগিদ দেন এই গবেষক।

মূল প্রবন্ধে ড. বজলুল হক খোন্দকার বলেন, বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বৈশ্বিক গড় অনুপাতের নিচে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভারতের চেয়ে কম। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণে সরকারের ব্যয়ও কম। সরকারের ব্যংয়ের গড় হার যেখানে ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের সেখানে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। উচ্চ আয়ের দেশের সরকারি ব্যয় ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মধ্যআয়ের দেশের ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নিম্ন আয়ের দেশের সরকারি ব্যয় ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশের সেখানে সরকারি ব্যয় মাত্র ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের রাজস্বের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায়  ওই বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ঋণ করে। আর ঋণ করে ব্যয় করার কারণে বাজেটের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ চলে যাচ্ছে সুদ পরিশোধে। এ জন্য ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাড়ানো দরকার। তা না হলে আমরা ঋণ করে এডিপি করছি। এ জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণে জোর দিতে হবে। এটা আগের চেয়ে এখন বেশি গুরুত্ব বেড়েছে। এ জন্য রাজস্বের সব ক্ষেত্রগুলোকে মনোযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ৩০ শতাংশের বেশি জাতীয় আয় আছে। এই ১০ শতাংশ মানুষের উপরে যদি ১৫ শতাংশ করে ট্যাক্স ধার্য  করতে পারি তাহলে যে অতিরিক্ত কর পাওয়া যাবে, তা এখন যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তার চেয়ে ২.৫ শতাংশ রাজস্ব যোগ হবে।

গত নির্বাচনের পর সকলের ধারণা ছিল দেশের অবস্থা অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এটাকে ভালো সময় উল্লেখ করে আ. রাজ্জাক বলেন, এটা সংস্কারের একটা ভালো সময়। রাজনৈতিক সরকার সাধারণত নির্বাচনের পরের দুই-তিন বছর সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আগামী বাজেটে সেই সময়, যেখানে সরকারের সেই পথনকশার সূচনা করবে।

তিনি বলেন, সরকারের সামনে এখনো আগের মতো মূল্যস্ফীতি প্রধান চ্যালেঞ্জ। সরকার ঋণের সুদহার বাড়িয়ে সেই মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমদানি করে মূল্যস্ফীতিকে সামাল দেওয়ার একটি সুযোগ থাকে। যেহেতু রিজার্ভ সামাল দিতে আমদানির নাগাল টানা হয়েছে, আমদানি করে মূল্যস্ফীতি কমানোর পথটি সরকারের হাতে নেই।

জায়েদি সাত্তার বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের পণ্যের গুনগত মান আন্তর্জাতিক মানের। এই পণ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব। স্থানীয় বাজার বিদেশে পণ্য দখল করার করার সম্ভাবনা কম, দেশিও পণ্যের মানই কোনো দেশের চেয়ে কম নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।