ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর দেওয়ার পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর দেওয়ার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বৈঠক। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রবৃদ্ধির ওপর জোর না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।  

রোববার (১০ মার্চ) রাতে রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তারা এ পরামর্শ দেন।

পাশাপাশি সংকোচনমূলক বাজেট, ঘাটতি কম রাখা এবং বৈদেশিক ঋণ কম নেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইএনএফের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা।

আলোচনা শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, পরামর্শ খুবই ভালো, আমরা রাইট ট্র্যাকে আছি। সবাই প্রশংসা করেছেন। আমি তো কখনো বলি না, সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা অনেক প্রশংসা পেলাম তাদের কাছ থেকে। তারা আমাদের বলেছেন- আপনারা ট্যাকল করছেন ভালো। কী কী সমস্যা আছে সবাই জানেন। এখনো পর্যন্ত সব ভালো, কিন্তু ভবিষ্যতে তো আপনাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ভালো আছে, তবে আপনাদের চেষ্টা করতে হবে।
 
সময় শেষ হয়ে আসছে বলতে কী বুঝিয়েছেন, সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সময় শেষ হয়ে আসছে বলতে, যে রিফর্মগুলো দরকার, সেগুলো করতে হবে। বিভিন্ন ফিল্ডের রিফর্ম করতে হবে না!

প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না, সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান হচ্ছে না কে বলল? কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জের যে সমস্যা, সেটা তো চলমান, সেটা তো এখনো শতভাগ হয়নি। তবে হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান তার প্রস্তাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন। সরকারের প্রতি তার পরামর্শ ছিল, দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে; কিন্তু সেগুলোর স্বাধীনভাবে যথাযথ কাজ করার সক্ষমতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি দূর করে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগে। তাতে খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি প্রকল্পে সুফল পেতেও দেরি হয়।

এ ছাড়া ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক অর্থনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসারও পরামর্শ দেন রেহমান সোবহান। এ জন্য ঋণখেলাপি ও করখেলাপিদের বিরুদ্ধে নতুন অর্থমন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, রাজনৈতিক অর্থনীতির সংস্কৃতির কারণে বড় ঋণখেলাপি ও করখেলাপিদের ধরা যায় না।

বৈঠক শেষে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছি। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারগুলো যেন যথাযথভাবে নির্ধারণ করা হয়, সেটি বলেছি। খেলাপি ঋণ কমানো, বিদেশি ঋণ কম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে। তিনি আরও জানান, বৈঠকে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশেরও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

বৈঠকের বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে আয় বৈষম্য উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আয় বৈষম্য কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি আমি। এ ক্ষেত্রে ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মসূচিসহ যেসব খাত থেকে প্রান্তিক মানুষ উপকৃত হবে, সেসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে বলেছি। এ ছাড়া আগামী বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

আলোচনার বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, কর আদায় বাড়ানোর ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু সিপিডি নয়, এখানে অন্য অর্থনীতিবিদ যারা ছিলেন প্রত্যেকে বলেছেন, কর আদায় ব্যবস্থা অটোমেটেড করতে হবে। ম্যানুয়ালি অটোমেটেড হলে হবে না। দেখা যাচ্ছে অটোমেশন কিছু কিছু হয়েছে, কিন্তু সেখানে হিউম্যান ইন্টারফেয়ার থাকে, যার জন্য ট্যাক্স সিস্টেমের সমস্যা দূর হচ্ছে না। এর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ট্যাক্স নীতিমালা প্রণয়ন এবং ট্যাক্স আদায় করা- এ দুটিকে আলাদা করতে হবে। আর একটি বিষয় হলো ট্যাক্স আদায় করার জন্য অফিসারদের ওপর এত বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, একজনই নিজের ইচ্ছাতে অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ক্ষমতাকে একটু কমিয়ে দিতে হবে।

বাজেটের আকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটের আকার নিয়ে কয়েকজন মতামত দিয়েছেন। আমাদের পরামর্শ হলো একটু সংকোচনমূলক করা। খরচটাকে একটু কমিয়ে আনলে ভালো। কারণ, মূল্যস্ফীতির একটি চাপের মধ্যে রয়েছি। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সেখানেও একটা চাপ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে কিছুটা কমিয়ে আনা বিশেষ করে প্রশাসনিক ব্যয়, পরিচালন ব্যয় এগুলো যতটা কমিয়ে আনা যায়। অপচয় রোধ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দুটি খাতেই বরাদ্দ কম। এক শতাংশের মতো বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার ফলে স্বাস্থ্য খাতের যে সেবা, তার গুণমান কম। অন্যদিকে অসংখ্য মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। সেটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনকি নীতি-নির্ধারকরাও চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছেন, যেখানে পারেন। স্বাস্থ্য খাত যদি আমরা আরও উন্নত করি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
জেডএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।