ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দাম বেশি, ক্রেতা কম রাজশাহীর আম বাজারে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
দাম বেশি, ক্রেতা কম রাজশাহীর আম বাজারে আমের দোকান। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর সুস্বাদু রসালো সব বাহারি জাতের আম আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে। তাই রসালো আম ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞও প্রায় শেষ হতে চলেছে।

অন্য বছর মধু মাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠ থেকে পুরো আষাঢ় পর্যন্ত চলে আমের মৌসুম। কিন্তু টানা খরার কারণে এবার একটু আগেভাগেই মৌসুম শেষ হতে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে তাই আমের বাজারে দাম চড়েছে, কমেছে ক্রেতা।

রাজশাহীর আমের বাজার থেকে এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে জাত আম খ্যাত গোপালভোগ, মোহনভোগ, কালিভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর। বিদায়ের পথে রয়েছে সুস্বাদু ল্যাংড়া আম। এখন বাজারে অল্প-স্বল্প ল্যাংড়া আম পাওয়া গেলেও দাম বেশি। বাজার এখন বলা যায় আম্রপালি ও ফজলির দখলে। আর কয়েক দিন বাদেই উঠবে আশ্বিনা আম।

বছরের এ সময়ে রাজশাহীর গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে আমকে ঘিরেই। গ্রামের প্রান্তিক আম চাষি থেকে শুরু করে বেকার যুবক কারোরই ফুরসত থাকে না। এক মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হয় রাজশাহী অঞ্চলে। গেল বার আম শেষ হয়ে গিয়েছিল বর্ষার আগেই। কিন্তু এবার তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার পরও ফলন ভালো হয়েছে। তাই বাজারের ঝুড়িতে এখনও শোভা পাচ্ছে কয়েক জাতের আম। যদিও এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার আমই বেশি পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহীর বাজারে। তবে দাম বেশি হওয়ায় আমের পাইকারি আড়ত ও খুচরা দোকানে ক্রেতা কম।



এর মধ্যে পরপর দুই দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। তাই এই কারণেও আমের ক্রেতা কমেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় আম নিয়ে বসে থাকছেন। কিন্তু কেনার মতো তেমন ক্রেতা পাচ্ছেন না। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারেও।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। সেখানেও এখন ক্রেতা কমেছে। এজন্য বাড়তি দাম ও বৃষ্টির কথাই বলছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী মহানগরের শিরোইলে থাকা ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফুটপাতে থাকা আম বাজার শেষ সময়ে জমে ওঠে প্রতিবছরই। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। এখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমই বেশি থাকে। এছাড়া থাকে নওগাঁর আমও। রাজশাহীর স্থানীয় বাগানের আম এখানে খুব কমই পাওয়া যায়। মূলত রাজশাহী থেকে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যান, তারাই এখান থেকে আম কিনে নিয়ে যান আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। যে কারণে এই আম বাজারে ভিড় ভালোই থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় লোকজন কম।

ব্যবসায়ীরা কেবল আম গোছানো ও সাজানোর কাজেই ব্যস্ত। কেউ বা অলস দৃষ্টিতে ক্রেতার জন্য করছেন অপেক্ষা। তাই মন ভালো নেই ওই এলাকার আম ব্যবসায়ীদের। ক্রেতার খরা না কাটলে তাদের অনেকেরই পুঁজিতে টান পড়বে ও ব্যবসা লাটে উঠবে বলেও জানান আম ব্যবসায়ীরা।



ঈদের পর থেকেই আমের বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান আম ব্যবসায়ী শাহীন ও তুহিন।

তারা বলেন, ঈদের সময় অন্যান্য বছর বেশি আম বিক্রি হয়। কারণ অনেকেই ঈদ করতে বাড়িতে এসে রাজশাহীর আম ঢাকা নিয়ে যান। কিন্তু এবার লোকজন কম। ক্রেতাদের অভিযোগ দাম বেশি। কিন্তু তাদের এখানে করার কিছু নেই। তারা সামান্য লাভে আম বিক্রি করে থাকেন। এখন যেই দামে কিনে নিয়ে আসেন সেই দামে তো আর বিক্রি করা যায় না। তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি না করলে লাভ হবে না। আর তা না হলে পুঁজি তোলা এবং দোকান কর্মচারীদের বেতন দিয়ে লাভের মুখও দেখা যাবে না বলে জানান।

এখানকার আরেক আম ব্যবসায়ী মিজানুর জানান, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারি-৪ আম, ফজলি আম এবং নওগাঁর আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম দুই হাজার ৬শ টাকা থেকে দুই হাজার ৮শ টাকা, আম্রপালি আম দুই হাজার ৪শ টাকা থেকে দুই হাজার ৬শ টাকা, ফজলি আম (সুরমা) এক হাজার ৮শ টাকা এবং ফজলি (মহারাজ) এক হাজার ৬শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।



এখানে আম কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, এবার আমের দাম বেজায় বেশি। শুরু থেকেই আমের বাজারে তেজিভাব বিরাজ করছে। আকারে ছোট দামও বেশি। রাজশাহীর স্থানীয় ভালো জাতের আমগুলো প্রায় শেষ। এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আমই বেশি। দেরিতে ওঠে বলে শেষ সময়ে ওই দুই জেলার আমের দখলেই থাকে বাজার। তবে এই আমের মিষ্টতা কম থাকায় স্থানীয়রা তেমন কিনতে চান না। আর বাজারে এখন আম্রপালি ও ফজলি আমই বেশি। কিন্তু এরপরও দাম কমছে না। তাই শেষ দিকে স্থানীয় মানুষজন আম কেনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে যাচ্ছেন তারাই টুকটাক আম কিনছেন বলেও মন্তব্য করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এবার হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ টন আম উৎপাদন হবে। এবার ৯৫ শতাংশ গাছেই মুকুল এসেছিল। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে এবং তা ছাড়িয়েও যেতে পারে।



তিনি জানান, এবার বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গোপালভোগ নামানো হয়, ১৫ মে থেকে। এছাড়া লক্ষ্মণভোগ বা রানিপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত ২৫ মে থেকে নামানো হয়। ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি নামানো হচ্ছে। আগামী ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি-৪ এবং গৌড়মতি আম নামানো যাবে। এছাড়া সর্বশেষ ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।