ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এশিয়ান এলপিজি সামিট

বাংলাদেশে এলপিজি প্রসারে বিপুল সম্ভাবনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
বাংলাদেশে এলপিজি প্রসারে বিপুল সম্ভাবনা এশিয়ান এলপিজি সামিটের শেষ দিনের একটি সেমিনারে বক্তারা | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশে দ্রুত বাড়ছে এলপিজির চাহিদা। দেশের মোট এলপিজির ৮৫ ভাগ ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালি কাজে।

প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও চলে গেছে এলপিজি সিলিন্ডার। গত আট বছরে দেশের গৃহস্থালি কাজে এলপিজির চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১৪ গুণ। ফলে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি এলপিজি খাতে রয়েছে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা। প্রয়োজন শুধু সরকারের নীতিগত সহায়তা।

বুধবার (৩১ মে) আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনব্যাপী এশিয়ান এলপিজি সামিটের শেষ দিনের একটি সেমিনারে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

৩০ মে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী সামিটে ৩০টি দেশের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন শতাধিক ডেলিগেট। এলপিজির সম্ভাবনা ও বিভিন্ন দিক নিয়ে দুই দিনে এক ডজনের বেশি সেমিনার ও প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশন এই সামিটের আয়োজন করে। প্লাটিনাম পার্টনার ও ভেনু হোস্ট হিসেবে ছিল বসুন্ধরা এলপিজি লিমিটেড।



একদিন আগে শুরু হলেও বুধবার সকালে ফিতা কেটে সামিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন। এরপর প্রধান অতিথি হিসেবে একটি সেমিনারে যোগ দেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল আমিন বলেন, জ্বালানি একটি দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলপিজি ব্যবহারের ফলে গাছ কাটার পরিমাণ অনেক কমেছে। যে কারণে এলপিজি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জেমস রোক্যাল, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজীম চৌধুরী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক বিগ্রে. জেনারেল (অব.) ইঞ্জি. আলি আহমেদ খান প্রমুখ।

বিকেলে ‘ক্লিন এনার্জি ফুয়েল হিসেবে এলপিজি এশিয়ার জন্য একটি পরিষ্কার রান্নার সমাধান’ বিষয়ে প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন করা হয়। এতে মডারেটর হিসেবে ছিলেন ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাইকেল কেলি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিইও (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং, সেক্টর-এ) এম এম জসিম উদ্দিন, বেক্সিমকো আইওসি’র সিইও এম মুনতাসির আলম, আইওসি এলপিজি’র নির্বাহী পরিচালক শৈলেন্দ্র কুরুমাদ্দালী, বসুন্ধরা সেক্টর-এ পরিকল্পনা ও জনসংযোগ প্রধান এবং বিএলএনজি, বিপিপিএল এর বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জি. মো. জাকারিয়া জালাল।



প্যানেল ডিসকাশনের আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বসুন্ধরা সেক্টর-এ পরিকল্পনা ও জনসংযোগ প্রধান এবং বিএলএনজি, বিপিপিএল এর বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জি. মো. জাকারিয়া জালাল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মার্কেটে এলপিজি ব্যবহার সবচেযে বেশি হয় গৃহস্থালি কাজে। মোট এলপিজি ব্যবহারের ৯১ শতাংশ এলপিজি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার হয়, যার মধ্যে ভারতের মোট এলপিজির ৯১ শতাংশ ব্যবহার হয় বাসাবাড়ির রান্নার কাজে। আর পাকিস্তানে যার পরিমাণ ৮৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গৃহস্থালি কাজে এলপিজির ব্যবহারের পরিমাণ ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশের মার্কেটে গৃহস্থালি কাজে এলপিজির চাহিদা ৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু সবগুলো কোম্পানি মিলে দক্ষিণ এশিয়ার চাহিদা পূরণ করতে পারছে ২৯ মিলিয়ন। বাকি ৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে আমি মনে করি ইনভেস্টরদের বাংলাদেশে এলপিজিতে বিনিয়োগ করার এখনই সময়।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিইও (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং, সেক্টর-এ) এম এম জসিম উদ্দিন বলেন, ভারত এলপিজিতে ভর্তুকি দেয়। আমরা ভর্তুকি চাচ্ছি না, শুধু এই খাতে সরকারের নীতিগত সহযোগিতা চাই। তাহলেই এলপিজিতে বিনিয়োগ আসবে। এলপিজির প্রসার হবে।

বেক্সিমকো আইওসি’র সিইও এম মুনতাসির আলম বলেন, ৯৮ ভাগ এলপিজি সরবরাহ করে বেসরকারি খাত। আবার বাসা বাড়ির ৯৮ ভাগ ব্যবহারকারী বেসরকারি এলপিজি ব্যবহার করে। অর্থাৎ ভর্তুকি দিলেই যে মানুষ সেটা ব্যবহার করবে বিষয়টা তেমন নয়। কতটা সহজে এলপিজি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে, অর্থাৎ সেবা এখানে মুখ্য বিষয়।

সকালে স্বাগত বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জেমস রোক্যাল বলেন, এলপিজি সেক্টরে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার, রেগুলেটরি কমিশন এবং কোম্পানিগুলোর নানাবিধ নতুন উদ্ভাবনের কারণে বাংলাদেশে এলপিজির ভিত্তি অনেক শক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ন্যায্য প্রতিযোগিতা এবং ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা এলপিজি সেক্টরকে আরও উন্নত করবে।

ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজীম চৌধুরী বলেন, এলপিজি খুবই নিরাপিদ জ্বালানি। কিন্তু অনেকে অবৈধভাবে এলপিজি সিলিন্ডার রিফিল করে থাকে, যা আমাদের কমিউনিটির জন্য খুবই বিপজ্জনক। আমাদের সকলের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে বলব এসব ক্রসফিলিং করা স্টেশনগুলোকে বন্ধ করা হয় যেন।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক বিগ্রে. জেনারেল (অব.) ইঞ্জি. আলি আহমেদ খান বলেন, এলপিজি স্টোরেজের ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। পাশাপাশি প্রতিবার এলপিজি রিফিলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা করতে হয়। এসবের ফলে দুর্ঘটনার রিক্স অনেকটা কমে যায় এবং জনসাধারণের জন্য নিরাপদ হবে। আর এটা অনুমদিত স্টেকহোল্ডাররা সঠিক নিয়মে করতে পারে। আর যারা অনুমোদন ছাড়া সিলিন্ডার রিফিল করে বাজারজাত করছে, তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি এবং ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের পরিচালক আজম জে চৌধুরী বলেন, রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম কিছুটা বেড়েছিল। যদিও এই সংকট আস্তে ধীরে কেটে যাচ্ছে। তবে এত কিছুর পরও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এলপিজি সেক্টরে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। তবে একটা বিষয় আমরা যতই পলিসি তৈরি করি না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত এই পলিসি বাস্তবায়ন না করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত এই সেক্টরের সেফটি নিশ্চিত হবে না।

উল্লেখ্য, দেশের এলপি গ্যাসের বাজারে শীর্ষস্থানে থাকা বসুন্ধরা এলপি গ্যাস এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত দুই দশকে ধারাবাহিকভাবে বেস্ট ব্র্যান্ড এবং সুপার ব্র্যান্ড স্বীকৃতিও পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে এলপি গ্যাসের ব্যবসা শুরু করে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রায় দুই যুগ সময় ধরে দেশের মার্কেট শেয়ারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস। দেশের মানুষের পছন্দের ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।