ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঢাকা এখন শুধু ‘মানুষের’ শহর

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১০
ঢাকা এখন শুধু ‘মানুষের’ শহর

ঢাকা: ঢাকা এখন শুধু মানুষের শহর! মানুষ আর মানুষে শুধু গিজগিজ করছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এর হিসেব অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে এখন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস।

এক বর্গকিলোমিটার জায়গায় ২৭ হাজার ৭শ মানুষ বসবাস করে।

নগর গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ঢাকায় ২ হাজার ১শ ৩৬ জন নতুন মুখ ঢাকায় ঢুকে পড়ছে। আর বছর শেষে মহানগরীতে যুক্ত হচ্ছে ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। যে হারে মানুষ বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না। এতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যানজটের সমস্যা দিন দিন কেবল প্রকটই হচ্ছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সেরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ঢাকায়। সরকারি সব মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগের প্রধান কার্যালয়, বেসরকারি বড় বড় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানও এই শহরে। প্রধান প্রধান ও বিশেষায়িত সব হাসপাতাল এখানে। ব্যাংক-বীমাসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায়। বিদেশি সব দূতাবাস এখানে।

এর পাশাপাশি শহরের মধ্যে আর আশপাশে গড়ে ওঠা শিল্প কলকারখানা একে বাণিজ্যিক শহরের চেহারা দিয়েছে। এ সবকিছুই সারা দেশের মানুষকে ঢাকামুখী করেছে।


এ বিষয়ে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ধনী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, হতদরিদ্র সব শ্রেণীর মানুষের আকর্ষণ ঢাকা শহর। এর একটা কারণ, বিকল্প কাজের সুযোগ অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে ঢাকাতেই বেশি। নদীভাঙা হতদরিদ্র মানুষ ঢাকা শহরে এসে রিকশা চালিয়ে, নির্মাণকাজের শ্রমিক হয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চায়।

নগর গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিম্নবিত্ত মানুষের একটি হিসাব দিয়েছেন। তিনি জানান, ‘তৈরি পোশাকশিল্পের ১৮ লাখ শ্রমিক এখন বাস করছে ঢাকা শহরে। এ ছাড়া আছে প্রায় ১০ লাখ নির্মাণ শ্রমিক। আরও আছে ৫ লাখের মতো রিকশাচালক। ’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নূর-উন-নবী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা হচ্ছে দেশের ক্ষমতাবান ও ধনিক শ্রেণীর শহর। যাদের অর্থ-বৈভবের শেষ নেই, এ শহর তাদের। একই সঙ্গে যারা নিঃস্ব, একেবারেই কিছু নেই, এ শহর সমানভাবে তাদেরও। ’

তিনি বলেন, ‘পেশায় যারা দক্ষ, এ শহরে তারা কাজ করে। যাদের শরীর আর পেশীর জোর ছাড়া কিছুই নেই, তাদেরও কাজের অভাব হয় না এখানে। আর তাই, টাকার দরকার হলে মানুষ ঢাকার উদ্দেশে ছোটে। ’


অধ্যাপক নূর-উন-নবী ‘জনসংখ্যা ও বাংলাদেশে শহুরে প্রবৃদ্ধি’ (পপুলেশন অ্যান্ড আরবান গ্রোথ ইন বাংলাদেশ) প্রবন্ধে বলেছেন, ‘২৫ বছরে ঢাকা শহরের মানুষ ৪ গুণ বেড়েছে। ১৯৮০ সালে মানুষ ছিল ৩২ লাখ। ২০০৫ সালে ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ। ’

তিনি জানান, ‘২০১৫ সালে মানুষ হবে ১ কোটি ৭৯ লাখ। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৭ হাজার ৭শ মানুষ বাস করে। ’

গবেষকদের মতে, ‘ঢাকা শহরে মানুষ আসা বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নদীভাঙন, গ্রামাঞ্চলে কাজের সঙ্কট, জলবায়ুর পরিবর্তন এসব কারণে মানুষ আসার পরিমাণ বরং আরও বাড়বে। কিন্তু মানুষ বাড়লেও ঢাকা শহরে নাগরিক সুবিধা বাড়ছে না। বরং যে সব সেবা আছে, তা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। ’

ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ঢাকার জনসংখ্যা অতি দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। ১৯৭৪ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখে। ১৯৮১ সালে ৩৫ লাখ, ১৯৯১ সালে ৬৮ লাখ, ২০০১ সালে তা ছাড়িয়ে যায় ১ কোটিতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢাকা শহরের আয়তনও দ্রুত বেগে বৃদ্ধি পায়।

জানা গেছে, ১৯৫১ থেকে ২০০১ এ ৫০ বছরে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৫ গুণ এবং আয়তন বেড়েছে প্রায় ১৮ গুণ। ১৯৭৪ সালের ১৮ লক্ষ মানুষের ঢাকা আজ জনসংখ্যার হিসাবে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখে।

জনসংখ্যা গবেষকদের মতে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ। আর ঢাকা শহরে এ বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ। এর অর্থ, আগামী বছর ঢাকা শহরের জনসংখ্যা হবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ ১ বছরে ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাড়বে এ শহরে।

বাংলাদেশ সময়:  ১১৩৫, অক্টোবর ৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।