ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি বেদি ভেঙে উন্নয়ন কাজ! 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২১
আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি বেদি ভেঙে উন্নয়ন কাজ! 

আগরতলা (ত্রিপুরা): রাজধানী আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শহীদ বেদি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে আগরতলা স্মার্টসিটি গড়তেই এ সিদ্ধান্ত।

তবে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।  

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় বীর শহীদ জওয়ানদের স্মরণে একটি শহীদ সৌধ তৈরি করা হয় আগরতলার প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে। পাশাপাশি এই সৌধের পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধে ব্যবহৃত ভারতীয় সেনাদের ব্যবহৃত কামান রাখা হয়।  

প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে এই শহীদ স্মৃতিসৌধে বীর জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানো হয়ে আসছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফেও শ্রদ্ধা জানানো হয় এখানে।  

কিন্তু আগরতলা স্মার্ট সিটির জন্য রাস্তা সম্প্রসারণসহ অন্য উন্নয়নমূলক কাজের নামে আগেই ট্যাঙ্ক ও কামান এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩ জুলাই) শহীদ বেদিটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন কঠোরভাবে করোনা কারফিউ চলছে। ফলে রাস্তাঘাটে লোকজন প্রায় থাকেই না। এই নির্জনতার সুযোগে এটি ভেঙে ফেলা হলো। যার জেরে রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  

ত্রিপুরা বিধানসভার সাবেক ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পবিত্র কর তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক কামান স্মার্ট সিটির নাম করে আগররতলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে আগেই প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরিয়ে নিয়ে গেছে। আজ শেষ চিহ্ন যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতি শহীদ বেদিও ভেঙে দিয়েছে। বলা চলে ভারত-বাংলা মৈত্রীর স্মারক সরিয়ে দেওয়ায় সমস্ত রাজ্যবাসী মর্মাহত।

ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক বিধায়ক তথা ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তাপস দে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রোববার (৪ জুলাই) বাংলানিউজের কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, উন্নয়নের নামে শহীদ বেদি ভেঙে ফেলা শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি একটি ঘৃণ্য কাজও। এর মধ্য দিয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং কংগ্রেস সরকারের যে ভূমিকা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তা মুছে ফেলার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।  

‘একই সঙ্গে ভারতীয় শহীদ বীর জওয়ানদের চরম অপমান করা হয়েছে। এবছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০তম বর্ষ। এই সময় এটা ভেঙে ফেলা স্বাধীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর আঘাত করার শামিল। ’

শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন কামান ও ট্যাঙ্ক সরিয়ে রাজধানীর লিচু বাগান এলাকার অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে রাখা হয়েছে। এই শহীদ স্মৃতিসৌধটিও এখানে রাখা হবে বলে আগেই জানানো হয়েছে। এলবার্ট এক্কা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক। যিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার সময় কুমিল্লার গঙ্গাসাগর এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার নামে পার্কটি তৈরি করে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই, ২০২১
এসসিএন/এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।