কলকাতা: ভারতে সোনার গয়না কেনার ক্ষেত্রে চালু হয়েছে নতুন নিয়ম। এখন সোনা কিনতে লাগবে প্যান কার্ড।
ভারত সরকারের জারি করা নতুন নিয়মে ১ লাখ রুপি বা তার বেশি অর্থ মূল্যের সোনা কিনলে ক্রেতাকে জমা দিতে হবে প্যান কার্ড। ১ এপ্রিল থেকে এই নিয়ম চালু হয়েছে। কলকাতাসহ গোটা ভারত জুড়েই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছন সোনা ব্যবসায়ীরা।
আগে জেনে নেওয়া যাক ‘প্যান কার্ড’ কী?
ভারতের আয়কর দপ্তরের আলফা নিউম্যারিক সংখ্যাযুক্ত একটি কার্ড যা আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকদের দেওয়া হয়। সাধারণভাবে ব্যাংক, বিমাসহ যেকোনো অর্থনৈতিক লেনদেনে এটি কাজে লাগে।
বর্তমানে ভারতে সোনা বিক্রি করা হয় গ্রামের হিসাবে। শনিবার (৪ এপ্রিল) ১০ গ্রাম সোনার বাজার দর কমবেশি ২৫ হাজার ১শ’ ৩২ রুপি। পাকা সোনার দাম কমবেশি ২৬ হাজার ৮শ’ ৮০ রুপি। বিগত দিনে ভরি হিসেবে সোনা বিক্রি করা হোতো। শুধু ভারত নয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই সোনার ওজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোতো ভরি বা তোলা।
ভারতে ১ তোলা বা ১ ভরি বলতে ১১.৬৬ গ্রাম ধরা হয়। তবে বর্তমানে ‘গ্রাম’ কেই সোনার একমাত্র একক হিসেবে ভারতে মান্য করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ক্যারেট পদ্ধতিটিও আলোচনা করা দরকার। ২৪ ক্যারেট সোনা বলতে বোঝানো হয় ৯৯.৯ শতাংশ শুদ্ধ সোনা। ২২ ক্যারেট সোনা বলতে বোঝান হয় ২২ পার্টস সোনা ও ২ পার্টস অন্য ধাতু। ১৮ ক্যারেট সোনা বলতে বোঝানো হয় ১৮ পার্টস সোনা এবং ৫.৭ পার্টস অন্য ধাতু। পার্টস ভলিউম বা পরিমাণের একক।
তবে সোনা কেনার ক্ষেত্রে এই নিয়মের ফলে ইতোমধ্যেই দিল্লিতে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। ‘স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটি’-এর ডাকে এক দিনের প্রতীকী ধর্মঘটে শামিল হন পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরাও। ৫ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসে ঠিক করবেন ভবিষ্যৎ পন্থা।
কলকাতার সোনা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল বউবাজারে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্যান কার্ড ব্যবহারে কালোবাজারি বাড়বে। যাদের প্যান কার্ড নেই, তারা বিল নেবেন না। এতে স্বর্ণ শিল্পে ধস নামবে।
তাদের এ আশঙ্কার কারণ জানতে চাইলে জানান, এক লাখ রুপিতে কম বেশি ৩০ গ্রাম সোনা কেনা যায়। কিন্তু উৎসবের মৌসুমেই বিল নিতে চাইবেন না। আর এখান থেকেই শুরু হবে কালোবাজারি।
এছাড়াও তারা জানান, সারা দেশে ১২৭ কোটি মানুষ রয়েছেন, কিন্তু প্যান কার্ড রয়েছে মাত্র ১০ কোটি মানুষের। এছাড়া ৭ কোটি কোম্পানির রয়েছে প্যান কার্ড। এর বাইরে-থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষের প্যান কার্ড নেই। ফলে এরা যখন ১ লাখ টাকার বেশি সোনার জিনিস কেনাকাটা করবেন, তখন কালোবাজারির একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে এ নিয়ে দর কষাকষি করেছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। তারা জানান অর্থ-বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য সৌগত রায়কেও।
বউবাজারের এক দোকান মালিক জানান, শহরের মানুষের থেকে সোনার ক্রেতা গ্রামাঞ্চলের মানুষরাই বেশি। তাদের কাছে এটা বিনিয়োগের একটি রাস্তা। এর মধ্যে কৃষিজীবী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কৃষিক্ষেত্রে যুক্তদের আয়কর দিতে হয় না বলে প্যান কার্ডও নেই। তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাও বাড়বে, কমতে পারে সোনা কেনার উৎসাহও।
তারা আরও জানান, শুধু সোনা নয়, দামি রত্নের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম জারি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হিরা কিনলেও জমা দিতে হবে প্যান কার্ড।
কিন্তু কেন এই নতুন নিয়ম? এর ব্যাখ্যা জানতে আয়কর বিষয়ে অভিজ্ঞ কলকাতার আইনজীবীরা জানান, এই নিয়মের ফলে কমে যাবে সোনা কেনার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার পক্রিয়া। নিয়ম না মানলে শাস্তি হবে সোনা ব্যবসায়ীর। বিল না দিলে তার দায় নিতে হবে ব্যবসায়ীকে। জরিমানাসহ জেল পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতে কালো সম্পদ সাদা করার দ্বিতীয় বৃহত্তম পন্থা সোনা কেনা। সবচেয়ে বেশি কালো অর্থ সাদা করা হয় বাস্তু সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে। তার পরেই রয়েছে সোনা। তাই সোনা কেনার উপর কড়া নজরদারি শুরু করতে চায় ভারত সরকার।
ভারতের ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিশিট’–এর বড় কারণ সোনা আমদানি। সোনা আমদানি কমাতে পারলে ভারতের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। আর এ লক্ষ্যেই আগামী দিনে সোনা কেনার সঙ্গে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করতে চলেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৫