ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

রবীন্দ্র ভারতীতে বাংলাদেশি ছাত্রীর সাফল্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪
রবীন্দ্র ভারতীতে বাংলাদেশি ছাত্রীর সাফল্য

কলকাতা: নাচ মিশে রয়েছে তার সত্ত্বায়, ছন্দ তার প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গী, মৃদঙ্গের বোলের সঙ্গে  অবিরত চলে তার ঝুমুরের সওয়াল-জবাব। তিনি হলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রী মনিরা পারভিন হ্যাপি।



বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি রবীন্দ্র ভারতীতে ‘কত্থক নৃত্যে’ প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন।

কিছুদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তার ‍হাতে স্বর্ণ পদক তুলে দেবেন। সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার দিযেছেন মনিরা পারভিন হ্যাপি।  

নাচ শুরুর দিনগুলো এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, প্রথমে মায়ের উৎসাহেই নাচের শুরু। নাচের নিয়মিত অভ্যাসের জন্য বকুনিও খেতে হয়েছে ছোট বেলায়। তখন কেউ কী জানত! বড় হলে সেই নাচই হয়ে উঠবে জীবন।

খুলনা জেলার মহম্মদ আবুল হোসেন এবং লাকি হোসেনের প্রথম সন্তান আজ আর শুধু তার বাবা-মা কিংবা পরিবারের গর্ব নয়। সে আজ প্রতিনিয়ত দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে চলছে।

নাচ শুরুর সময়ের কথা জানতে চাইলে মনিরা পারভিন হ্যাপি জানালেন পাঁচ বছর বয়েসে আলতাফ মাহামুদ সঙ্গীত ভবনে (উদীচী) সেলিম পপলু-এর কাছে নাচ শেখেন। তৎকালীন উদীচীর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ রায়ের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি অংশও নিয়েছেন।

ওই সময় হ্যাপি ‘বাংলাদেশ ধ্রুব পরিষদ’ আয়োজিত নৃত্য প্রশিক্ষণে প্রথম হয়ে ‘নৃত্য মুকুল’, ‘নৃত্য পারিজাত’ প্রভৃতি উপাধি লাভ করেন।

সময়টা ২০০১ সাল, খুলনার শহীদ মাজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে পড়ার সময় ‘সাউথ এশিয়ান চাইল্ডস ফোরাম’ আয়োজিত একটি শিবিরে একমাত্র বাংলাদেশি নৃত্য শিল্পী হিসেবে কলকাতা, দিল্লি, গ্যাংটক, সিকিম এবং নাথুলাপাশে নৃত্য পরিবেশন করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হ্যাপি শিবলী মহম্মদ এবং শামীম আরা নিপার তত্ত্বাবধানে নাচের তালিম নিতে থাকেন।

এই সময় তিনি ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ আয়োজিত ‘কত্থক’ এবং ‘সৃজনশীল নৃত্যে’ দুইটি স্বর্ণ পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে মনিরা পারভিন হ্যাপি কখনও একক এবং কখনও যৌথ নৃত্য পরিবেশণ করেছেন। শুধু নৃত্য পরিবেষণই নয় তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নৃত্য পরিকল্পনা এবং নৃত্য পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

২০০৯ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনের (আইসিসিআর) ৩ বছরের বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

মনিরা পারভিন হ্যাপি বাংলানিউজকে বলেন, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং নৃত্য গুরু সন্দীপ মল্লিকের কথা কখনও ভুলার নয়। তারা শুধু ভারতে আমাকে নৃত্য শিক্ষাই দেননি, জীবনের মূল দর্শণকেও বুঝতে সাহায্য করেছেন।

ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে মনিরা পারভিন হ্যাপি ‘গৌড়ীয় নৃত্য’ শিক্ষা শুরু করেন। তিনি কলকাতা, দিল্লি, কেরালা সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ‘গৌড়ীয় নৃত্য’ পরিবেশন করেন।

আর গুরু সন্দীপ মল্লিকের কাছে শিক্ষা তার জীবনে এক বিশেষ অধ্যায় বলে মনে করেন তিনি।

বাংলানিউজকে হ্যাপি বলেন, নাচ গুরুমুখী বিদ্যা। অর্থাৎ গুরু তার লব্ধ বিশেষ দক্ষতা শিষ্যদের প্রদান করেন। আর সেই বিশেষ দক্ষতা  শিষ্যারা বহন করে নিয়ে যান আগামী প্রজন্মের জন্য। আর

হ্যাপি প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের ১০০ বছর উপলক্ষে একটি পরিবেশনায় অংশ নেন।

এছাড়াও কলকাতার আইসিসিআর-এর বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন মনিরা পারভিন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে শান্তি নিকেতন এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে অসংখ্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

এছাড়াও বিজয় দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি,পয়লা বৈশাখে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাই-কমিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন হ্যাপি।

 ২০১৩ সালে রবীন্দ্র ভারতীর নাটক বিভাগের ড. তরুণ প্রধানের সহকারী হিসেবে বাংলাদেশে রায়বেঁশে নৃত্য বিষয়ক কর্মশালা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নৃত্য পরিবেশনা করেন তিনি।

মনিরা পারভিন হ্যাপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছায়ানট-এ ড. তরুণ প্রধানের পরিচালনায় দুটি নাটকেও অংশ নেন।

ভারতের প্রখ্যাত নৃত্য গুরু পদ্মভূষণ প্রাপ্ত পণ্ডিত বিরজু মহারাজের ‘মীরাবাঈ’ নৃত্যনাট্যে তিনি অংশ নিয়েছেন তিনি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি হ্যাপি বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন নৃত্য ভাবনা আমাকে এক অতল সাগরে ফেলে দিচ্ছে। আরও বহুদূর যেতে হবে। বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রসার ঘটাতে হবে। বিদ্যালয় ,কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নৃত্য বিভাগ স্থাপন করে বাংলাদেশে নৃত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

সবশেষে মনিরা পারভিন হ্যাপি বলেন, অনেকের কথাই আজ বলতে ইচ্ছা করছে। তবে বিশেষভাবে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আফসার আহমেদের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়া আইসিসিআর এর সাবেক প্রোগ্রাম ডিরেক্টর প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেতা রাজকমল-এর কথাও মনে পড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।