ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বয়স যখন ১৮

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২০, এপ্রিল ২০, ২০১৪
বয়স যখন ১৮

ব্যালট পেপারে একসঙ্গে দু’তিনটে প্রতীকে ছাপ দিয়ে ভোট নষ্ট করা যেত আগে। রাগে-অভিমানে অনেকেই সেটা করত।

প্রকারন্তরে জানিয়ে দিত, তোমরা সবাই বাজে। তোমাদের কাউকে পছন্দ নয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এ ভোট নেওয়া চালু হওয়ায় সেই সুযোগ বন্ধ হলো। পোলিং বুথে গিয়ে ইভিএমের একটি বোতাম টিপতেই হবে। একটা বোতাম টিপলেই মেশিন লক্‌ড। একাধিক বোতাম চাপার উপায় নাই। ভোট না দিয়ে বেরিয়ে আসার রাস্তাও বাদ। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ক্ষমতার বাইরে। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। আদালত আপত্তি মেনে নেয়। রায়ে জানিয়ে দেয়, ইভিএমে সব প্রার্থীর নাম আছে প্রতীকের নীচে, এর বাইরে আর একটি বোতাম থাকবে। তার পাশে লিখতে হবে ‘এলওটিএ’ বা ‘নোটা’, মানে নান অব দ্য অ্যাভাব। অর্থাৎ ওপরে যতো প্রার্থীর নাম আছে, ওদের কাউকে পছন্দ নয়। ভোটের চাইলে সেই বোতামে চাপ দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবজ্ঞা প্রকাশ করতে পারে। কাউকে না কাউকে ‘হ্যাঁ’ বলতে না পারলে ‘না বলা যাবে। যারা রাজনীতিকদের না বলতে চেয়েছিল তারা খুশি। সগর্বে পোলিং বুথে গিয়ে ‘নোটা’র বোতাম টিপে বেরিয়ে আসছে।

প্রশ্ন উঠেছে কোন কেন্দ্রে যদি সবাই ‘না’ ভোট দেয় তখন। প্রার্থীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে। সবার প্রত্যাখানে মাথা হেট হয়ে যাবে। আদালতের রায়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটাই তো চাই। এমন হলে খারাপ লোকেরা রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশের সাহস দেখাবে না। দাগী লোকেরা বৈভবের দাপটে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। রাজনীতির উপর মানুষের আস্থা ফিরবে। দুর্বৃত্তদের দেওয়াল ভেঙে যোগ্য-সৎ লোকেরা রাজনীতিতে প্রবেশ করবে।

নির্বাচন কমিশন নজর রাখছে, কোন কেন্দ্রে কত ‘না’ ভোট পড়ছে। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শুধু নয়, গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফুটে উঠতে পারে ‘না’ ভোটে। এবার সারাদেশে ভোট গ্রহণ কন্দ্রে ৯ লাখ ৩০ হাজার। গতবারের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। সব কেন্দ্রের ছবি ফুটছে গোপন ক্যামেরায়। অফিসে বসেই নির্বাচন পরিচালনা কতৃপক্ষ দেখছেন ভোটদানের ছবি। ভোটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুঝতে চাইছে, তাদের মানসিকতা। সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত করতে নিয়োগ করা হয়েছে ৮০ লাখ র্কমচারী, ৩০ লাখ নিরাপত্তাকর্মী। আপাতত দু’এক জায়গায় মাওবাদী হামলা ছাড়া ভোট চলছে নির্বিঘ্নে।

অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা মানছেন না। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মালদহের হোটেলে থাকার সময় এসি মেশিনে আগুন লেগে যে ধোঁয়া বেরুল সেটা কি ভূতে করেছে? ‘আমি যে পশ্চিমবঙ্গকে সোনা দিয়ে মোড়ে দিচ্ছি, অনেকের তা পছন্দ হচ্ছে না। রাস্তায় বিস্ফোরণ পুঁতে আমাকে উড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। ’ মমতা যা বলছেন তার শতগুণ বলছেন পরিষদরা। তাদের বক্তব্য, দিদির মতো নেত্রী দুনিয়ায় নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেনই। তাই তাঁকে মেরে ফেলার চক করা হচ্ছে।

বিরোধীরা বলছে, স্বরাষ্ট্র দফতর তো মমতার হাতে। তিনি তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছেন না কেন? পাবলিক মিটিং-এ গিয়ে লোককে বলে বেড়াচ্ছেন। এর সমাধান তো তাদের হাতে নেই। একমাত্র পুলিশ আর গোয়েন্দারা সত্যিটা খুঁজে বার করতে পারবে। এ মুহূর্তে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিটা জরুরি। মমতা জানিয়েছেন, আমাকে কি বিরোধীদের কথায় চলতে হবে? আমি যা ভাল বুঝব, তাই করব, যা মন চাইবে তাই বলব।

ভোটারদের যোগ্যতা হয় ১৮ বছরে। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বয়সটা ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করেছিলেন। বয়সটা বড় সাংঘাতিক। ন্যূনতম অন্যায় দেখলে গর্জে ওঠে। ভুলের সঙ্গে আপস করাটা ধাতে সয় না। এবার নতুন ভোটার দশ কোটি। সংখ্যা নেহা‍ৎ কম নয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নতুন ভোটার প্রায় এক কোটি। তারা মনে করছে, টাকার টানে ন্যায়-অন্যায় একাকার। মুখ থুবড়ে পড়ছে সততা। যে যতো খারাপ সে ততো ক্ষমতাবান। বিত্তের জোরে চিত্ত জয়ের চেষ্টা যাদের,  ১৮ বছরের কাছে তারা হেরেই যাবে। পোলিং বুথে ঢুকে ইভিএমের সামনে দাঁড়িয়ে ‘নোটা’ সুইচটা টিপে বুঝিয়ে দেবে তোমাদের চাই না। আগে তোমরা ভাল হও, তবেই ভালবাসব।

**হার মানা হার

**চোখ ছলছল ছিটমহল

**বিয়ের গেরোয় মোদী


বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।