ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট

১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ শিক্ষক প্রতিনিধি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ শিক্ষক প্রতিনিধি ...

চট্টগ্রাম: চারুকলা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে টানা ২০ দিন আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস না পাওয়ায় আন্দোলনে অনড় তারা।

 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও প্রক্রিয়াগত যেসব কাজ রয়েছে তা শেষ করার সময় দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুটি কয়েক শিক্ষকের স্বার্থে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে শহরে ফেলে রাখার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে এলে শিক্ষকদের আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন তাঁরা।  

জানা যায়, রোববার (২০ নভেম্বর) বিকাল তিনটায় চারুকলা স্থানান্তরের জরুরি কাগজপত্র নেওয়ার কথা বলে চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন শিক্ষকদের একটি দল। পরে বের হবার সময় শিক্ষকদের হাতে ব্যক্তিগত কাজের ফাইল-পত্র দেখলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। রাত আড়াইটার দিকে তাঁরা মুক্ত হন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা চারুকলা স্থানান্তরের জরুরি কাগজপত্র নিতে এসেছেন বলে ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় ব্যক্তিগত এবং অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ে বের হলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। আমাদের একমাত্র দাবি, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যে সুযোগ সুবিধা আছে তা আমরা পাচ্ছি না। তাছাড়া এখানকার বেশিরভাগ অবকাঠামো ব্যবহার অনুপযোগী। এখানকার শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। টানা ২০ দিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি না মানা হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের স্বার্থে ও এ ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষকের স্বার্থে এখানে ফেলে রেখেছে তাদের। কয়েকজন শিক্ষক চান না এ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে ফিরুক। তাঁদের বিভিন্ন সুবিধার জন্য এখানেই রয়ে যেতে চান। তাছাড়া চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার ওপর। যদি আমরা এখানে থাকি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জায়গাটি দখলে রাখতে পারবে। আমরা চাই না কারও উদ্দেশ্য হাসিলে হাতিয়ার হতে।  

এদিকে, চারুকলা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে সমন্বয়ক কমিটি। যা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। গতকাল কাজের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে এসে আটকা পড়েন এ কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্তু আমাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি শিক্ষার্থীরা আমাদের সহযোগীতা না করে তাহলে আমরা কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করবো? গতকাল আমরা কিছু ফাইলপত্র নিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের বের হতে দেয়নি তারা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইঁয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক। তবে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। যেহেতু আইনী বিষয় রয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু যাচাই বাছাই করেই ব্যবস্থা নিবে।  

সংকট সমাধানে সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বৈঠকে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, চারুকলার বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধিরা রয়েছেন। আমরাও চাই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান।  

১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করে একটি ইনস্টিটিউট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি ও অনুষদ কমিটি একত্রিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ব্যতিরেকে একটি সিন্ডিকেট গঠন এবং চারুকলা বিভাগকে ইন্সটিটিউটে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।  

১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ চারুকলা বিভাগ ও চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘চারুকলা ইন্সটিটিউট ঘোষণা দিয়ে একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। এই গেজেট প্রকাশের পর, তৎকালীন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও স্থপতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যদিও ২০০২ সালে পিটিশনটি খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আইনগত সমস্যা এবং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আপত্তি প্রকাশের কারণে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্সটিটিউট নির্মাণের এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত রাখা হয়। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।  

২০১০ সালের ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজের অস্থাবর সকল সম্পদ ডিউ অব গিফটের আওতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে একে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চারুকলা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে নগরীর মেহেদিবাগের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে আত্মীকরণ এবং প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক হস্তান্তর সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। উচ্চ আদালত এই রায় স্থগিত রাখেন।

তবে এই স্থগিত আদেশ বলবৎ থাকাকালীন সময়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে কোন প্রকার ঘোষণা না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারুকলা কলেজকে আত্মীকরণ করে চারুকলা বিভাগকে বাদশা মিয়া সড়কে স্থানান্তরিত করে। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আলাদা হয়ে এ ইনস্টিটিউট কার্যপরিচালনা শুরু করে। শিল্পী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে পরিচালক নিযুক্ত করে নতুনভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।