ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি হলুদ দলের নির্বাচন চাওয়া ৪০ শিক্ষকই দলের সদস্য নন!

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
চবি হলুদ দলের নির্বাচন চাওয়া ৪০ শিক্ষকই দলের সদস্য নন! ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন চেয়ে আহ্বায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছেন ২০১ শিক্ষক। এদিকে চিঠির পাল্টা জবাবে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি বলছে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৪০ জনই হলুদ দলের সদস্য নন।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, এ চিঠি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য- নির্বাচন নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচন বিলম্বিত করে বিশেষ ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করা।  

বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতাদর্শিক একটি প্লাটফর্মের (হলুদ দল) প্রক্রিয়াধীন অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটসহ সব বিধিবদ্ধ পর্ষদের নির্বাচন বন্ধ রাখার দাবিতে দলের সদস্য নন এমন প্রায় ৪০ জনসহ কিছু শিক্ষকের একটি চিঠি দলের আহ্বায়কের কাছে সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে।  

স্বাক্ষরকারীদের তালিকায় জামায়াত-বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকদেরও নাম রয়েছে (অধিকতর যাচাই সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তীতে তথ্য তুলে ধরা হবে)। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী সিন্ডিকেটসহ সব বিধিবদ্ধ পর্ষদের মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচন বন্ধ করা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজকে বিভক্ত করার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সরাসরি ইন্ধন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি জানতে পেরেছে।

এ চিঠি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর পরিপন্থী। এছাড়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্তব্যকারী দু'জন শিক্ষকের মধ্যে একজন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন এবং আরেকজন নিজে দলের বিদ্রোহী হয়ে অপর বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দু’জন সম্মানিত ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক পর্ষদের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেট নির্বাচন আটকে রাখার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিরোধী কথা বলেছেন। অথচ তাঁরা কিছুদিন আগে উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন, যা স্ববিরোধী।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমন কয়েকজন রয়েছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিধিবদ্ধ পর্ষদের দায়িত্বে থেকে বিধিবদ্ধ শূন্য পদগুলোতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে অবজ্ঞা করেছেন। তদুপরি, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বেশিরভাগই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটির কারণে অতীতের নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রশাসনের সমর্থনে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া সত্ত্বেও বিগত শিক্ষক সমিতি ও ডিন নির্বাচনে স্ট্যান্ডিং কমিটি মনোনিত সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং জামায়াত-বিএনপি সমর্থক সাদা দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে দলীয় প্রার্থী হেরে যান বলে উক্ত অনুষদের ডিন প্রার্থীসহ কয়েকজন শিক্ষক স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

চিঠি প্রদানকারীদের মূল উদ্দেশ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচন বিলম্বিত করে বিশেষ ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করা। কেননা, শিক্ষকদের আদর্শিক ফ্লাটফর্মের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নির্বাচনের অজুহাতে বিধিবদ্ধ ও অলংঘনীয় নির্বাচন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ বা যৌক্তিকতা নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটসহ সব পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অলংঘনীয় দায়িত্ব এবং শিক্ষকদের আইনগত ন্যায্য অধিকার।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর মেয়াদোওীর্ণ কমিটির সদস্যদের অধীনে আর কোনও নির্বাচন চান না জানিয়ে চিঠি দেন হলুদ দলের ২০১ শিক্ষক। তাদের দাবি হলুদ দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদ 'স্ট্যান্ডিং কমিটি'র সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয় দুই বছরের জন্য। হলুদ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলুদ দলের সমর্থক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে ২০১ শিক্ষকের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষককে জামায়াত ও বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তরা কারা সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। এ ছাড়া ৪০ জনকে হলুদ দলের সদস্য নন বলে দাবি করা হয়েছে।  

শিক্ষকরা বলেন, এখানে সবাই হলুদ দলের। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া এবং কয়েকজন সদস্য ফরম পূরণ না করায় এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অথচ স্ট্যান্ডিং কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণেই অনেক শিক্ষক ফরম পূরণ করেনি। তা ছাড়া ২০১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪০ জন যদি দলের সদস্য নাও হন, বাকি ১৬০ জনের বক্তব্যের কী কোনও গুরুত্ব নেই? এমন ঢালাওভাবে এতজন শিক্ষককে অভিযুক্ত করার কোনও যৌক্তিকতা নেই।  

 বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।