চট্টগ্রাম: হাইকোর্টের রায়ে আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। নিম্ন আদালত আমার ছেলে হিমাদ্রীর হত্যাকারী প্রধান আসামিসহ মামলার প্রত্যেক আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে এভাবে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানান হিমাদ্রী মজুমদারের বাবা প্রবীর মজুমদার।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে আমরা হতাশ। আমার ছেলের হত্যাকারী প্রধান ও পাঁচ নম্বর আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। একটা বাঘ যখন খাঁচা থেকে বের হয়, সে বাঘ আরও বেপরোয়া ও হিংস্র হয়ে ওঠে। আমরা খুই উৎকণ্ঠায় আছি। আমার এক ছেলেকে হারিয়ে তার মা পাগলপ্রায়। আমার অন্য ছেলেকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে দিন পার করছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা কে দেবে?
হিমাদ্রীর মা গৌরী দাশ বাংলানিউজকে বলেন, নিম্ন আদালতে যে রায় দিয়েছিল আমরা মনে করেছিলাম হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখবে। আমার ছেলের হত্যাকারীরা ফাঁসিতে ঝুলবে। কিন্তু মামলার প্রধান আসামিকেই বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে আমরা খুবই হতাশ এবং ভীতসন্ত্রস্ত। তারপরেও তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। তার মধ্যে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি।
নগরের পাঁচলাইশে কুকুর লেলিয়ে মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী মজুমদারকে হত্যায় বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বাকি দুইজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকা তিন আসামি হলেন- মাহাবুব আলী ড্যানি, জাহিদুল ইসলাম শাওন ও জুনায়েদ রিয়াদ। এদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম শাওন ও জুনায়েদ রিয়াদ পলাতক রয়েছে। আর শাহ সেলিম ওরফে টিপু ও শাহাদাত হোসেন সাজুকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন তৎকালীন চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল হিমাদ্রীকে ধরে নিয়ে যান আসামি শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি।
হিমাদ্রী ওই স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন। আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ছাদ থেকে। হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর একই বছরের ২৩ মে মৃত্যু হয় হিমাদ্রীর।
এ ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
বুধবার (২ নভেম্বর) ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২২
বিই/এমআই/টিসি