ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উৎসবে শেষ হলো তিন কন্যার বিয়ে 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
উৎসবে শেষ হলো তিন কন্যার বিয়ে  ...

চট্টগ্রাম: জমকালো আয়োজন। হাজারো অতিথির খাবার, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, উপহার সামগ্রী, সবই ছিল বিয়েতে।

নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে উপহার সামগ্রীও।
 

মর্জিনা আকতার, মুক্তা আকতার ও তানিয়া আকতার। মা-বাবাহীন এতিম এ তিন কন্যা বেড়ে উঠেছেন নগরের সরকারি শিশু নিবাসে। গন্তব্যহীন জীবনে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া সেই তিন কন্যার জাঁকজমকপূর্ণ এ বিয়ের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।  

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটা। চট্টগ্রাম অফিসার্স ক্লাবে বাজছিল সানাইয়ের সুর। সুসজ্জিত গাড়ি নিয়ে অফিসার্স ক্লাবে উপস্থিত তিন কন্যা। লাল বেনারসি পরে একে একে নেমে আসেন মর্জিনা, মুক্তা, তানিয়া।  

চট্টগ্রামের নগরপিতা এম রেজাউল করিম চৌধুরী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন সেই তিন কন্যাকে স্বামীর হাতে তুলে দিতে।  

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিয়ের দাওয়াত প্রেরণ করা হলে তিনি তিন কন্যার জন্য দোয়া করেন এবং উপহার হিসেবে স্বর্ণালংকার পাঠান। মহতি এ উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তিন কন্যার প্রত্যেককে দুই ভরি করে মোট ছয় ভরি স্বর্ণালংকার এবং দুই লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া প্রত্যেক যুগলকে ১টি করে ফ্রিজ ও টিভিসহ দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রয়োজনীয় আসবাব ও সারঞ্জাম যেমন: খাট, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল, ফ্যান ও রন্ধনসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তিন যুগলের এই বিবাহ অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখার জন্য আরও উপহার দেওয়া হয়েছে বিয়ে ও গায়ে হলুদের শাড়ি, স্যুট, ঘড়ি, পাঞ্জাবী, জুতোসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবার সমাজের পরিত্যক্ত ও অভিভাবকহীন শিশুদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। পরবর্তীতে এ শিশুদের পিতামাতার পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের যথাযথ অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যারা অভিভাবকহীন থেকে যায়, সমাজসেবা অধিদফতর তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ভরণ-পোষণ ও পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলে।

এমনই তিন শিশু মর্জিনা আকতার, মুক্তা আকতার ও তানিয়া আকতার। সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধানে বড় হয় তারা। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। তিনজন এখন অ্যাটেনডেন্ট পদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। অভিভাবকহীন এই তিন কন্যার জীবনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজনে হাত বাড়ায় জেলা প্রশাসন।

১৯৯৭ সালে মাত্র ৪৫ দিন বয়সে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের সাহায্যে সমাজসেবা কার্যালয়ে আসেন মর্জিনা আকতার। আজ জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত মোহাম্মদ ওমর ফারুক (২৯) কে।  

চার বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মুক্তা আকতার গাঁটছড়া বাঁধেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের (২৬) সঙ্গে।  

২০০৩ সাল। তখন তানিয়ার বয়স দুই বছর। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মায়ের মৃত্যু হয়। সেই থেকে  সমাজসেবা অধিদফতরে তানিয়া আকতার। পেশায় বিক্রয়কর্মী হেলাল উদ্দিনের (২৬) সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।

গত বুধবার সন্ধ্যায় তিন কন্যার গায়ে হলুদের আয়োজন হয় সরকারি শিশু পরিবার অঙ্গনে।  উৎসবমুখর হলুদ সন্ধ্যায় নেচে-গেয়ে মেতে উঠেন সকলে। প্রায় এক হাজার অতিথির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় স্বামীদের হাতে তুলে দেওয়া তিন কন্যাকে।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু তাদের বাবা-মা নেই, আমরা চেয়েছি এই মেয়েরা পরিচয় নিয়ে বড় হয়ে উঠুক। এজন্য একটি ধণাঢ্য পরিবারের মেয়ের যেমন করে বিয়ে হয়, তাদের গয়নাগাটি, সাজসজ্জা ও পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে, তাদের আপ্যায়ন থেকে শুরু করে একেবারে আড়ম্বরপূর্ণভাবে এই মেয়েদের আমরা বিয়ে দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২

বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।