ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মৎস্য সংরক্ষণ এলাকায় নজরদারিতে ঘাটতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
মৎস্য সংরক্ষণ এলাকায় নজরদারিতে ঘাটতি ...

চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরনের প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের মালিকানা বাংলাদেশের।

এর মধ্যে ৭১০ কিলোমিটারের উপকূলীয় অঞ্চলসহ ৩ হাজার ৮৮৬ বর্গকিলোমিটারের দুটি সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এলাকায় নজরদারি নেই সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের।

ফলে বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিক ট্রলারে অবাধে মাছ আহরণ এবং বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে প্রায়ই মাছ শিকারের ঘটনা ঘটছে।

এছাড়া দেশে কিছু মাছের তেমন চাহিদা না থাকলেও বিদেশে চাহিদা থাকায় অবাধে ধরা হচ্ছে।

হাঙ্গর ও কচ্ছপ শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে মাছ আহরণে নিয়োজিত বাণিজ্যিক ট্রলার রয়েছে ২৩৫টি। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক ট্রলার আছে প্রায় ৬৮ হাজার। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ছয় হাজার নৌ-যানের। চট্টগ্রাম থেকে নজরদারির জন্য রয়েছে একটিমাত্র চেকপোস্ট।  

সাগরে ১০ মিটার গভীরতার পর থেকে সামুদ্রিক মাছ আহরণ এলাকা বিস্তৃত। ৪০ মিটার গভীর পর্যন্ত নৌ-যানগুলোর মাছ আহরণের সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরতা ২২শ মিটার। বাণিজ্যিক বা যান্ত্রিক ট্রলার মাছ আহরণ করে সমুদ্র উপকূল থেকে ১০০-১১০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত। এসব নৌ-যানের বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই।  

এতসব সীমাবদ্ধতার পরও গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে রেকর্ড করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯১১ টনে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৪ টনে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ টন। সর্বশেষ ২০১১-২০১২ অর্থবছরে আহরণ হয় ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৯ টন, যার মধ্যে  বাণিজ্যিক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৬৯ টন এবং আর্টিসান বোট থেকে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ টন মাছ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট ছাড়াও ২২০ প্রজাতির সি-উইড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী জানান, ‘এখনো সমুদ্র থেকে মাছ এবং চিংড়ি বেশি আহরণ করা হয়। এছাড়া অক্টোপাস, ক্যাটলফিস, কাঁকড়া, বা স্কুইডের চাহিদা স্থানীয় বাজারে কম থাকলেও এগুলোও প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়। রফতানি করা হয় বিদেশে’।

তিনি বলেন, সমুদ্র থেকে লাক্ষা, রূপচাঁদা ও কালোচাঁদা, টুনা, ম্যাকারেল, লইট্যা, চ্যাপা, সামুদ্রিক রিটা, শাপলা পাতা মাছ, তাইল্লা, পোয়া, সুরমা, ইলিশ, ছুরি, ফাইস্যা, সামুদ্রিক বাইন ও কই মাছ মিলিয়ে প্রায় ২০ প্রকার মাছ আহরণ করা হয়। সবমিলিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দুইশ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি মিলিয়ে ৪০টির মতো মাছ নিয়মিত শিকার করে দেশের জেলেরা।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতর চট্টগ্রামের পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং নানা পদক্ষেপের কারণে প্রতিবছরই মাছের উৎপাদন বাড়ছে। চট্টগ্রাম থেকে একটি চেকপোস্টের মাধ্যমে সমুদ্রগামী ট্রলারের প্রতি নজরদারি করা হয়। সাসটেইনেবল প্রজেক্টের মাধ্যমে এটাকে ১৬টিতে উন্নীত করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফিসারিজ বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ উন নবী বলেন, সমুদ্রসীমাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে কোন এলাকার মধ্যে কি পরিমাণ মাছের মজুদ আছে-এটা নির্ণয় করা দরকার। প্রয়োজনে সরকার রিসার্চ ভ্যাসেল ভাড়া করে আনতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।