ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উত্তপ্ত হচ্ছে হাটহাজারী বিএনপির রাজনীতি, যুবদলে পাল্টাপাল্টি কমিটি 

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
উত্তপ্ত হচ্ছে হাটহাজারী বিএনপির রাজনীতি, যুবদলে পাল্টাপাল্টি কমিটি  ...

চট্টগ্রাম: হঠাৎ করে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। যুবদলের ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে এর সূত্রপাত।

 

এরই সূত্র ধরে একদিনের ব্যবধানে হাটহাজারী উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী আসনে বিএনপির রাজনীতি তিন ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার একটি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিনের পুত্র কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সক্রিয়।  

হাটহাজারী উপজেলার আওতাধীন ১৩ ইউনিয়ন ও চসিকের ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফখরুল হাসান ও সদস্য সচিব নুরুল কবির তালুকদার। অভিযোগ রয়েছে, এতে কোনও মতামত নেওয়া হয়নি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিনের।  

অপরদিকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এসব কমিটি গত ৯ জুলাই স্বাক্ষর করলেও তা প্রকাশ করা হয় এক মাস পর গত ১৭ আগস্ট। আর ঘোষিত এসব কমিটিতে বিএনপির বিদ্যমান তিন গ্রুপের সাথে সমন্বয় না করে শুধুমাত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের অনুসারীদের নিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পদবঞ্চিতরা। যার কারণে ক্ষোভ বিরাজ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানার অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে।  

আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ঘোষিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন মীর হেলাল। এই কমিটি এক মাস পর প্রকাশ্যে আসার একদিন পর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত পাল্টা কমিটি প্রকাশ হয়। তাতে কমিটির অনুমোদন তারিখ হিসাবে দেখা যায় ১৬ আগস্ট। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন ঘোষিত কমিটি ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ও এস এম ফজলুল হকের অনুসারীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ১৬ আগস্ট কমিটি ঘোষণা করার পর গত ১৭ আগস্ট হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। নোটিশে ইউনিট কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ কেন্দ্রীয় যুবদলের কাছে রয়েছে বলে জানানো হয়। এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে কেন সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না- ২৪ আগস্টের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

এদিকে সেলিম উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি এম ইলিয়াস আলীকে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হেলাল উদ্দিনের অনুসারীরা।  

জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উত্তর জেলা যুবদল ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট হাটহাজারী থানা যুবদলের কমিটি দেয়। থানার অধীনে ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার সময় আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কথা রাখেনি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। যার কারণে থানার অধীনে ১১টি ইউনিটে পাল্টা কমিটি দিয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, সংগঠনের নিয়ম অনুসারে জেলা কমিটি আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। সেই নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হবে। আমার সম্মতি ছাড়া আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কমিটি দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে  কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না- প্রশ্ন আমার।

হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফখরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পাল্টা কমিটি দেওয়ার কারণে যুগ্ম আহ্বায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্র। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত কমিটি জেলায় অনুমোদন দিয়েছে।  

সদ্য কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি এম ইলিয়াস আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল এর কারণে হাটহাজারী বিএনপি, যুবদলের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিজের পছন্দের মানুষদের নিয়ে হাটহাজারী বিএনপি ও যুবদলের কমিটি দিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার মামলায় সাক্ষী হওয়ায় তিনি কেন্দ্রীয় যুবদল নেতাদের ভুল বুঝিয়ে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। হেলাল সাহেবের কারণে হাটহাজারীতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন হচ্ছে না’।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক  এস এ মুরাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, হাটহাজারী থানার অধীনে ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার সময় আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনজনকে নিয়ে নগরে একাধিক বৈঠক করার পরও কমিটি নিয়ে একমত হতে পারেনি তারা। সম্প্রতি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত কমিটি কেন্দ্র ও জেলা যুবদল অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু পাল্টা কমিটি দেওয়ার কারণে কেন্দ্র যুগ্ম আহ্বায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক পাল্টা কমিটি না দিয়ে কেন্দ্র ও আমাদের কাছে  লিখিত অভিযোগ দিতে পারতেন। তখন আমাদের কিছু করার সুযোগ ছিল, এখন আমাদের কিছুই করার নেই। সবকিছু কেন্দ্র থেকে হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।