ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২২ অক্টোবর ঐক্য পরিষদের গণঅনশন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২২ অক্টোবর ঐক্য পরিষদের গণঅনশন বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।

চট্টগ্রাম: একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব সকল প্রতিশ্রুতি এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (১৬ জুলাই) বিকালে চেরাগী পাহাড় চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া সংখ্যালঘুদের কাছে আর কোনও বিকল্প থাকবে না। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২২ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

 

সরকারি দলের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বৈষম্য বিলোপ আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পাবর্ত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং মহানগর যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুবেল পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. জিনবোধি ভিক্ষু, উত্তর জেলার সভাপতি ইন্দু নন্দন দত্ত, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী, মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, কাউন্সিলর নিলু নাগ, কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তা, লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, অনিল বিকাশ চাকমা, অধ্যাপিকা বিজয় লক্ষ্মী দেবী, জন অর্পণ সমাদ্দার, মতিলাল দেওয়ানজী, সুমন কান্তি দে, বিশ্বজিৎ পালিত, কল্লোল সেন, বিজয় কৃষ্ণ দাশ, অধ্যাপক শিপুল দে, সিজার বড়ুয়া, রিমন মুহুরী, প্রদীপ দে প্রমুখ।  

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার বিভিন্ন থানা কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলার উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, সৎসঙ্গ বিহার, সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটি, গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটি, সনাতন সংগঠন, শারদাঞ্জলী ফোরাম, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, বৌদ্ধ সমিতি, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বাংলাদেশ বৈদিক পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, লোকনাথ সেবক সংঘ, চাক্তাই লোকনাথ ধাম, দেওয়ানেশ্বরী কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটি, উত্তর চট্টগ্রাম মৎসজীবী জলদাস ফেডারেশন, স্বস্তিকা, ভ্রাম্যমাণ গীতা প্রচার সংঘ, হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদ নেতারা।

অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্ব স্ব ধর্মের মত অন্য সকল ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। এখনো তারা মাজারে, উপাসনালয়ে মানত দেয়, প্রার্থনা করে। অথচ পাকিস্তান আমলে নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে একটানা অদ্যাবধি ধর্ম অবমাননার মিথ্যা জিগির তুলে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার চালিয়ে সংখ্যালঘু শিক্ষকসহ তাদের মন্দির উপাসনালয়, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে এবং এর মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু জনগণের মনে ইতিমধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে ও তাদের ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।  

‘দেশবাসী জেনেছে, ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে, হনুমানের পায়ের কাছে পবিত্র কোরান শরীফ রেখে এসব অপকর্ম চালানো হয়েছে, হচ্ছে। এর পরেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপথগামী কেউ যদি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে তার দায় তারই, অন্য কারো নয়। কিন্তু একজনের দায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চালিয়ে দিয়ে তাদের নিঃস্ব করা জঘন্য চক্রান্তের অংশ বলে আমরা মনে করি। এসব ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সবটাই পরিকল্পিত। সরকার, সকল রাজনৈতিক দল, আলেম-ওলেমা সমাজের প্রতি আবেদন জানাই- আসুন সংখ্যালঘুদের জানমাল সম্পদ রক্ষায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করি’।

অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত ধর্মের পবিত্রতার স্বার্থে পবিত্র ধর্মকে রাজনীতির সাথে যুক্ত না করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পর সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ভয়াবহ বিপর্যয় ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে এবং মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করতে যারা তৎপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার, প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন সমাবেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি।  

আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

সমাবেশ শেষে হাজারো জনতার মিছিল আন্দরকিল্লা হয়ে লালদিঘী ময়দানের মোড়ে এসে শেষ হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।