ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হলের নাম পাল্টে গেছে ছাত্রলীগের চিকায়

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
হলের নাম পাল্টে গেছে ছাত্রলীগের চিকায় এএফ রহমান হল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: খাতা-কলমে হলটির নাম এএফ রহমান হলেও যে কেউ দেখলে মনে হবে এটি ‘বিজয় হল’। দেয়াল জুড়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের চিকায় পাল্টে গেছে এ হলের চেহারা।

যার ফলে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ৪ তলা উঁচু লাল দালানের এএফ রহমান হলটি।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো বর্তমানে দখলে রয়েছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে।

এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে হলের বাইরে। অন্যথায় কোনো একটি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে হলে উঠতে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না হওয়ায় তৈরি হয়েছে এমন হল দখলের সংস্কৃতি।  

বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এএফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল, সিক্সটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল, এছাড়া শহিদ আব্দুর রব হলে রয়েছে বাংলার মুখ, ভিএক্স ও কনকর্ডসহ কয়েকটি গ্রুপের অনুসারীরা। সূর্যসেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা। বছরের বিভিন্ন সময় বগিভিত্তিক গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো হলজুড়ে চিকা লাগানোয় পাল্টে গেছে হলটি আসল রূপ।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, প্রথমদিন এসে ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চবিতেও বিজয় ৭১ হল রয়েছে। পরে জানতে পারি, এখানে ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ গ্রুপের অনুসারীরা থাকে বলেই হলটির চিত্র এমন।  

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফ উদ্দিন রুহান বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় আবাসিক হলে ঢুকতেই ভয় লাগে। পড়াশোনার চেয়ে এখানে রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর চর্চাই বেশি হয়। হলগুলোতে একবার ঘুরে আসলেই বুঝা যায়, এখানে কোন গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি মারামারি লাগলো! 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নই, তবুও হলগুলোর দেয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না, প্রতিটি গ্রুপের কর্মীরা এটা করে থাকে। যদি এফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করেছে।  

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগিভিত্তিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারি না আমরা।

এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বাংলানিউজকে বলেন, বছরখানেক আগে আমরা পুরো হলটি পরিস্কার করার পরদিনই হলের দেয়ালে চিকাগুলো মারা হয়েছে। এটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। যেহেতু এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর চিকা মারা হয়েছে, তাই তাদের নেতাদেরও বিষয়টি দেখা উচিৎ। এছাড়া আমি একা চাইলে তো হবে না, চিকা অপসারণ করতে প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। সর্বোপরি হলের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এমএ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।