ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুলিশের উদ্যোগ: মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে ১৬ পরিবার

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২২
পুলিশের উদ্যোগ: মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে ১৬ পরিবার

চট্টগ্রাম: তাদের কেউ কেউ হারিয়েছেন স্বজন। কখনো ভাড়া বাসা, আবার কখনো এর বাড়ি কিংবা ওর বাড়ি- এভাবেই দিন কেটেছে।

তবে এবার পুলিশের উদ্যোগে চট্টগ্রামের এমন অসহায় ১৬ পরিবার পাচ্ছে স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠিকানা। রাত পোহালেই রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চাবি বুঝে পাবেন তারা।
অসহায় এসব মানুষের মাহেন্দ্রক্ষণে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর এরই মধ্য দিয়ে সারা জীবনের দুঃখ ঘুচে মিলবে তাদের শান্তির ঠিকানা।  

এমনই একজন লোহাগাড়ার মিনু আরা বেগম (৩৮)। ১৫ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারান তিনি। এরপর এক মেয়েকে নিয়ে তার ঠাঁই হয় একটি ভাড়া বাসায়। দীর্ঘদিন ধরে ছিলো না নিজের কোনো বাড়ি। দৈনিকভিত্তিক দিন মজুরের কাজ ও মানুষের ঘরে গৃহাস্থলী কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে এক-আধপেট খেয়ে কোনোমতে যাচ্ছিল তার দিন। স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার জায়গা পেতে যখন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিনু আরা বেগম, তখনই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।  

মুজিববর্ষ উপলক্ষে লোহাগাড়া থানার সদর ইউনিয়নের উকিলের পাড়ায় এই নারীকে তিন শতক জায়গাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ আধা পাকা বসতঘর উপহার দিতে যাচ্ছে পুলিশ। আগামীকাল ঘরটি বুঝে পাবেন তিনি।

পুলিশ সূত্র জানা যায়, শুধু মিনু আরা বেগম নন, জেলার ১৬ থানার প্রত্যেকটিতে একটি পরিবার পাচ্ছে পুলিশের তৈরি করে দেওয়া বাড়ি। ‘মুজিব বর্ষে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় সারাদেশে ‘মুজিব ছায়া’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি থানায় ভূমি-গৃহহীন একটি করে পরিবারকে জায়গাসহ ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও ১৬ টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে ৩শতাংশ জায়গা কিনে সেখানে ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও শৌচাগার, দুটি করে ফ্যান, লাইট ও টিউবওয়েল ব্যবস্থাও। এরই ধারাবাহিকতায় লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের সার্বিক তত্ত্ববধায়নে বিধবা মিনু আরা বেগমকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নতুন ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত মিনু আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ বছর আগে স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর থেকে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সারাদিন কাজ করার পরে ভাড়া বাসায় আসলে মেয়েকে নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম। অনেক সময় কাজ না থাকলে বাসা ভাড়া নিয়ে টেনশনে দিন অতিবাহিত করতে হতো। মেয়ে কষ্ট করে ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করিয়েছি। তারও একটা ভবিষ্যৎ আছে, তবে পেটের কষ্টের চেয়ে ঘরের কষ্ট ছিল অনেক বড়। ’

তিনি আরও বলেন, জীবনে কখনো ভাবিনি আমি যে একটি ঘরে মালিক হব। এখন ঘরে ইলেকট্রিক্যাল কাজ চলতেছে। রাতে সব কাজ হয়ে যাবে। আমি ও মেয়ের জন্য নুরুচ্ছফা চেয়ারম্যান ও পুলিশ আমাদের জন্য যা করল সেটি কোনো দিন ভোলার নয়। একসময় এলাকায় পুলিশ এলে খুব ভয় লাগত। ভয়ে ঘর থেকে বের হতাম না। আজ সেই পুলিশই আমাদের ঘর করে দিল। আমাদের চির ঋণী করে দিলেন পুলিশ।

জেলার একাধিক নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে জেলার ১৬ থানার অধীন একটি করে গৃহহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত বাড়ী আগামীকাল রোববার (১০ এপ্রিল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্স সিভিক সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।  

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অনেক মানবিক কাজ করে থাকে। অতীতেও করেছে, যা হয়তো এখন আরও বেশি দৃশ্যমান। আমরা জনগণের খুব কাছে যেতে চাই। লোহাগাড়ায় যাকে ঘর দেওয়া হচ্ছে, তিনি বিধবা নারী। দিনমজুর ও  গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন। তার পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২২
এমআই/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।