ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিক্ষাবিদ মাহবুবর রহমানের স্মরণানুষ্ঠান

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
শিক্ষাবিদ মাহবুবর রহমানের স্মরণানুষ্ঠান ...

চট্টগ্রাম: উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সংগ্রামী সহসভাপতি মুক্তচিন্তার লেখক, গবেষক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ মাহবুবর রহমানের স্মরণানুষ্ঠান চট্টগ্রাম একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যে ৬টায় উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি জসীম চৌধুরী সবুজ।

 

উদীচী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট অসীম বিকাশ দাশের সঞ্চালনায় স্মরণানুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কবি ও সাংবাদিক রহমান মুফিজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুমী দে, উদীচী জেলা সংসদের সহসভাপতি সুনীল ধর, আবুল কাশেম, পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন মাহবুবর রহমানের ছোট ভাই মাহফুজুর রহমান মেরু, শ্যালক মাহবুব উল আলম চৌধুুরী, বড় ছেলে আউয়াল মাহবুব চৌধুরী, ছোট ছেলে সাফায়েৎ মাহাবুব চৌধুরী, উদীচী জেলা সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক জয়তী ঘোষ এবং জয়শ্রী মজুমদার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মাহবুবর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মাহবুবর রহমানের জীবনী পাঠ করেন উদীচীর জেলা সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ধর। মাহবুবর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলার শিল্পীকর্মী ভাই বোনেরা ও নিবেদিতা দাশ।

বক্তারা বলেন, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী সাতকানিয়া থানার প্রত্যন্ত খাগরিয়া গ্রামের একজন সন্তান। শঙ্খ নদের কোলঘেঁষে থাকা খাগরিয়া গ্রামে ১৯৫০ সালের ৩০ জানুয়ারি তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই শান্ত মানুষটাকে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা শিক্ষার অপ্রতুলতা এবং কৃষকের প্রতি নায্য অধিকার এসব নিয়ে ভাবাতো। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন পড়ালেখার উদ্দেশ্যে। এই সময় উনি জড়িয়ে পড়েন সাহিত্য অঙ্গনে, সাহিত্যিক আবুল ফজলের সান্নিধ্যে আসেন। সাহিত্যিক আবুল ফজলের সম্পাদনায় একটি পাক্ষিক পত্রিকায় মাহবুবর রহমান লেখালেখি করতেন এবং  লেখনীর প্রতি তার এই তীব্র ভালোবাসা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিল।  

একসময় তৎকালীন অবৈধ ভাবে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা নেওয়া সরকারের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে উনার লেখা একটি বইও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যায়ের সঙ্গে আপসহীন মাহবুবুর রহমানের কলম তারপরেও থেমে থাকেনি। সরকারি কর্মচারী হয়েও অনড় ছিলেন গণতন্ত্রের পক্ষে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ছিলেন কলমের মাধ্যমে সক্রিয়। ১৯৯২ সালের জাহানারা ইমামের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হলে মাহবুবুর রহমান ছুটে যান সেখানে। গণবিচারে একাত্মতা প্রকাশ করে থাকেন আন্দোলনে। সাহিত্য জীবনে ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে পরপর দুইবার জেলা ভিত্তিক একুশের সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের সম্পর্ক সুদীর্ঘ ৩২ বছরের। সর্বশেষ নির্বাচিত উদীচী চট্টগ্রাম জেলা কমিটিতে তিনি সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ১১ মার্চ উনি আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে উদীচী পরিবার সহ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে শোকের ছায়া নেমে আসে।  

তিনি ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত অমায়িক মানুষ। মা, মাটির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিচরণ করা এই মুখচ্ছবি প্রতিনিয়ত খুঁজে ফিরবে তার অসংখ্য সহযোদ্ধা, ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা,  মার্চ ৩০, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।